স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় একটা ঘটনা পরবর্তী সময়ে পাঠ্যবইতে উঠে এসেছিল। তা হল—বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ট্রেনে সফর করার সময় সেই কামরায় এক ইংরেজ সাহেব ছিলেন। যিনি আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের নাক ডাকায় অতিষ্ট হয়ে তাঁর জুতো ট্রেনের বাইরে ফেলে দেন। সেটা ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। আর দেখেন ইংরেজ সাহেব ঘুমোচ্ছেন। তখন তাঁর কোট নিয়ে ট্রেনের বাইরে ফেলে দেন বাংলার বাঘ। যখন ইংরেজ সাহেব ঘুম থেকে উঠলেন তখন কোট দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘এই বর্বর আমার কোট কোথায়?’ জবাবে তাঁকে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘তোমার কোট আমার জুতো খুঁজতে গিয়েছে।’ এই রকম একটি ঘটনা এবার ঘটল শিলিগুড়ির দেশবন্ধু পাড়ায় একটি টেবল টেনিস অ্যাকাডেমির উদ্বোধনে। সেখানে জুতো বিভ্রাটের জেরে লজ্জায় পড়লেন শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? শনিবার মান্তু ঘোষের টেবিল টেনিস অ্যাকাডেমির উদ্বোধন ছিল। সেখানে হাজির হয়েছিলেন মেয়র গৌতম দেব, প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য, বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ, ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার এবং চেয়ারম্যান প্রতুল চক্রবর্তী। নিজের বক্তব্য রেখে মেয়র সভাস্থল ছেড়ে বেরিয়ে দেখেন নির্দিষ্ট জায়গায় তাঁর জুতো নেই। এই খবর চাউর হতেই শিলিগুড়ি জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। কোথায় গেল মেয়রের জুতো? এমন প্রশ্ন উঠতে থাকে। মেয়রও বিস্তর বিড়ম্বনায় পড়েন। তখন দার্জিলিং জেলা লিগাল এইডের সম্পাদক অমিত সরকার নিজের জুতো জোড়া খুলে মেয়রকে এগিয়ে দেন। আর মেয়র সেটা পায়ে গলিয়ে বাড়ি যান।
আরও পড়ুন: থানায় ডেকে যুবতীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ জলপাইগুড়িতে, ক্লোজ পুলিশ অফিসার
তারপর কী ঘটল? কিন্তু রহস্য তখন উন্মোচন হয়নি। মেয়রের জুতো গেল কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর তখনও মেলেনি। ফলে জুতোর খোঁজ চলতে থাকে। পরে জানা যায়, প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য তড়িঘড়ি যেতে গিয়ে মেয়রের জুতো ভুল করে পরে বাড়ি চলে গিয়েছেন। কারণ অশোক ভট্টাচার্য আগেই অ্যাকাডেমি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে তিনি বুঝতে পারেন অন্য কারও জুতো পায়ে গলিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সে খবরও প্রকাশ্যে আসে। রাজনীতির ময়দানে যাঁরা যুযুধান প্রতিপক্ষ তাঁদের মধ্যেই ঘটে জুতো বিভ্রাট। লজ্জায় পড়ে যান অশোক ভট্টাচার্য।
কে, কী ঠিক বলছেন? এই ঘটনা নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে তখন একের পর এক বক্তব্য এসে হাজির হল। প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আসলে সিঁড়ির কাছে অন্ধকার ছিল। আমি সেটা বুঝতে পারিনি কার জুতো পরেছি। বাড়িতে ফিরে বুঝতে পারলাম অন্য কারও জুতো পরে চলে এসেছি।’ প্রাক্তন মেয়রের এই কথা শুনে বর্তমান মেয়র সৌজন্যই দেখালেন। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম দেবেব বক্তব্য, ‘এটা নিয়ে এত হল্লার কী আছে। বয়স্ক মানুষ। ভুল হতেই পারে। এমন ভুল যে কেউ করতে পারতেন। আমার তো কোনও সমস্যা হয়নি। পরে উনি আমার জুতো ফিরিয়ে দেবেন। এত হল্লা না হলেই ভাল হতো।’