আইপিএল ২০২৫ মরশুমটি চেন্নাই সুপার কিংস (CSK)-এর জন্য একপ্রকার দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে। সম্ভবত তারাই একমাত্র দল যারা চাইত না যে টুর্নামেন্ট আবার শুরু হোক। আইপিএল ২০২৫ শেষে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে চেন্নাই সুপার কিংস।
আইপিএল ২০২৫ মরশুমটি চেন্নাই সুপার কিংস (CSK)-এর জন্য একপ্রকার দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে। সম্ভবত তারাই একমাত্র দল যারা চাইত না যে টুর্নামেন্ট আবার শুরু হোক। রাজস্থান রয়্যালস ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ — যারা চেন্নাইয়ের মতোই প্লে-অফের আগেই ছিটকে গিয়েছিল — পুনরায় শুরু হওয়ার পর অন্তত একটি করে ম্যাচ জিতলেও, চেন্নাইয়ের দুর্ভোগ অব্যাহত থাকে। মঙ্গলবার (২০ মে) দিল্লিতে তারা মরশুমের ১৩তম ম্যাচে ১০ম পরাজয়ের মুখ দেখে তারা। ফলস্বরূপ, দলটির সম্পূর্ণ কৌশল, রিটেনশন থেকে শুরু করে নিলাম পরিকল্পনা পর্যন্ত সবকিছুই এখন প্রশ্নের মুখে রয়েছে।
চেন্নাইয়ের আর একটি ম্যাচ বাকি রয়েছে মরশুম শেষ হওয়ার আগে। তারা আগামী রবিবার (২৫ মে) আমদাবাদে যাচ্ছে গুজরাট টাইটান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে। যারা ইতিমধ্যেই প্লে-অফ নিশ্চিত করে ফেলেছে। কিন্তু সেই ম্যাচের পরও চেন্নাইয়ের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে যাবে। আগামী নিলামের জন্য পরিকল্পনা এবং কঠিন রিটেনশন ও রিলিজ সিদ্ধান্ত নেওয়া।
ধোনির অধ্যায় শেষ?
৪৩ বছর বয়সি ধোনির কাছ থেকে উচ্চ প্রত্যাশা রাখা হয়তো নিছক ভক্তির কারণেই, কারণ হাঁটুর চোটের সঙ্গে লড়াই করা এই তারকা বাস্তবে আগের মতো খেলতে পারছেন না। কিন্তু ধোনি, আইপিএল এবং চেন্নাই — এই তিনের সংমিশ্রণ সবসময়ই আবেগপ্রবণ ছিলেন। এবার প্রথমবার অনেক বিশেষজ্ঞ ধোনিকে অনুরোধ করেছেন, যেন তিনি অবসর নিয়ে যান, যখন তাঁর মর্যাদা এখনও অক্ষুন্ন রয়েছে।
এই মরশুমে ধোনির পারফরম্যান্স খুবই হতাশাজনক। লখনউয়ের বিরুদ্ধে ২৬ রানের ইনিংস ব্যতীত (যার জন্য তিনি ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান), তিনি ১৩ ম্যাচে মাত্র ১৯৬ রান করেছেন, স্ট্রাইক রেট ১৩৫.২। যদিও ডেথ ওভারে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫১.৭২। এটি আইপিএলে তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম খারাপ মরশুম। আগের বছরের ২২০.৫ থেকে এটি অনেকটাই কম। তবুও, রবীন্দ্র জাদেজা (১৬২.৬৭) ছাড়া তিনিই একমাত্র ব্যাটার যাঁর স্ট্রাইক রেট ১৫০-র ওপরে।
চেন্নাই ধোনিকে ছাড়বে, না ধোনিই নিজে সরে দাঁড়াবেন — তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এটা স্পষ্ট, আগামী নিলামের আগে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা আসছে।
ব্যাটিং অর্ডারে আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজন
চেন্নাইয়ের বড় সমস্যা ছিল তাদের টপ অর্ডার। এই লাইনআপের গড় ছিল মাত্র ২৩.৩১, যা অন্য সব দলের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং গুজরাট টাইটান্সের তুলনায় প্রায় তিনগুণ কম। তাদের স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪২.৪৮, যা পঞ্জাব কিংসের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম এবং এটি তাদের আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ।
নতুন বলে ব্যর্থতা আরও স্পষ্ট হয়েছে। মাত্র ১৩৫.৪৭ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছে, যেখানে বাউন্ডারি রেট মাত্র ৪.৫। গায়কোয়াড় দলে থাকলেও, রাচিন রবীন্দ্র (গড় ২৭.৩) ও ডেভন কনওয়ে (গড় ২৩.৫) — এই নিউজিল্যান্ড জুটিকে রিলিজ করা হতে পারে। রাহুল ত্রিপাঠীও ব্যর্থ হওয়ায় তিনিও বাদ পড়তে পারেন।
এর পরিবর্তে দলে রয়েছে তরুণ উরভিল প্যাটেল ও আয়ুষ মাত্রে। ১৭ বছর বয়সি আয়ুষ ৫ ইনিংসে ১৬৩ রান করেছেন, স্ট্রাইক রেট ১৮১। দক্ষিণ আফ্রিকার ডিওয়াল্ড ব্রেভিসও ৫ ম্যাচে ১৬৮ রান করেছেন, স্ট্রাইক রেট ১৬৪.৭১ — তিনিও ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত বিকল্প।
বিজয় শঙ্কর ও দীপক হুডাও মাঝের ওভারে পর্যাপ্ত অবদান রাখতে পারেননি — ফলে তারাও রিলিজ হতে পারেন। এক্ষেত্রে চেন্নাই ভারতীয় টপ অর্ডার প্রস্তুত রেখে বিদেশি মিডল অর্ডার ব্যাটারদের দিকে ঝুঁকতে পারে।
চেন্নাই রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজাকে প্রোমোট করে কিছুটা সমস্যার সমাধান করেছে। তবে দুজনকেই নিয়ে আগামী বছরের জন্য ভাবনা দরকার। অশ্বিন ব্যাট হাতে করেছেন মাত্র ৩৩ রান, বল হাতে ৮ উইকেট ৪০.৪৩ গড়ে। জাদেজা নিয়েছেন ৮ উইকেট ৩৮.৩৮ গড়ে এবং ২৮০ রান করেছেন স্ট্রাইক রেট ১৩৭.২৫। যদিও জাদেজাকে ছাড়ার সম্ভাবনা কম, তবে চেন্নাই অর্থ বাঁচাতে অশ্বিনকে রিলিজ করতে পারে।
মাথিশা পথিরানাও এই বছর ধারাবাহিক ছিলেন না — ১১ ম্যাচে ১২ উইকেট, ইকোনমি রেট ১০.১৭। কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং স্বীকার করেছেন, তিনি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। ফ্লেমিং বলেন, ‘হ্যাঁ, সে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেনি। আমরা ওর ওপর অনেক আশা রেখেছিলাম বলেই তাকে রিটেইন করেছিলাম। তবে সে কিছুটা উন্নতি করেছে। আগের থেকে ভালো অবস্থায় আছে, যদিও এখনও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি এখন সে এমন একটা মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ব্যাটসম্যানরা ওকে বুঝে ফেলেছে। ওর এখন দরকার নিজের স্কিল আরও ধারালো করা, যাতে কেরিয়ারের প্রথম দিকের মতো কার্যকর হতে পারে। ওর স্কিল সেট ইউনিক, কিন্তু এ বছর একটু ব্যর্থ।’ চেন্নাইয়ের জন্য সামনে রয়েছে কঠিন সিদ্ধান্ত, সাহসী রদবদল যদি তারা আবার ট্রফির লড়াইয়ে নামতে চায় ২০২৬ সালে।