বাবা-মাকে হারানোর ক্ষতি অপূরণীয়। বাবা-মা নেই, একথা মেনে নেওয়া বড়ই কঠিন। আর বলি অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছিলেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেবিষয়েই মুখ খুলেছেন অভিনেতা। জানিয়েছেন, তিনি কীভাবে এই কঠিন পরিস্থিতি সামলেছিলেন। মনোজ জানিয়েছেন, তাঁর বাবা আর কে বাজপেয়ী এতটাই কষ্ট পাচ্ছিলেন যে তিনিই একসময় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে বাবাকে শরীর ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
বাবার কথা বলতে গিয়ে মাকেও মনে পড়ে যায় মনোজের। অভিনেতা জানান, তাঁর মা গীতা দেবীও শক্ত মনের মানুষ ছিলেন। মায়ের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির কথা বলেন মনোজ। বলেন, মা নিজেই ডাক্তারকে অনুরোধ করেছিলেন, যাতে তিনি তাড়াতাড়ি চলে যেতে পারেন। বলেন, এমন কিছু করতে যাতে তাঁর বোঝা সন্তানদের আর না বইতে হয়।
সিদ্ধার্থ কান্নানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মনোজ বলেন, ‘আমার বাবা আমার খুব কাছের ছিলেন এবং আমি তাকে যত্ন করতাম। আমি ভাগ্যবান যে আমার ভাইবোনরাও বাবার যত্ন নেওয়ার জন্য তাঁর কাছে ছিল। কারণ, আমি সেই মুহূর্তে কেরালায়, কিলার স্যুপ-এর শুটিং করছিলাম। আমি বাবাকে বলেছিলাম যে আমি শুটিংয়ে যাচ্ছি তবে শ্যুটিং শেষ করেই ফিরে আসব।’
সেই কঠিন অভিজ্ঞতার কথা মনে করে মনোজ বলেন, ‘আমি শ্যুটিং করছি, সেসময় একদিন, আমার বোন ফোন করে আমাকে বলল, যে আমার বাবা এই মুহূর্তে জীবনের শেষ পর্যায়ে রয়েছেন। তবে ডাক্তারা মনে করছেন, তিনি এই পৃথিবীতে আঁকড়ে থাকতে চাইছেন। বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক গভীর বলেই বোনই আমায় বলল আমি যাতে বাবাকে এই দেহ থেকে মুক্ত হতে বলি। আর আমাকে বোন যখন একথা বলে, আমি তখন কিলার স্যুপের জন্য শট দেব। আমার সঙ্গে আমার স্পট বয়ও তখন আমার ভ্যানে ছিল। আমি ওঁর সামনেই বাবার সঙ্গে কথা বললাম, এটা আমার জন্য ভীষণই কষ্টকর ছিল। আমি ফোনে বললাম, বাউজি আপনি এবার যান, এবার আপনার যাওয়ার সময় হয়েছে। একথা আমার পক্ষে বলা অত্যন্ত কঠিন ছিল। আমার সামনে বসা তখন স্পট বয়ও এটা শুনে কাঁদতে শুরু করে। উনি চিৎকার করেই কাঁদতে থাকেন। এদিকে আমি তখন কথা বলার পরই শট দিতে যাচ্ছি। আমার জন্য এটা সামলানো খুব কঠিন ছিল। এর ঠিক পরদিন খুব ভোরে বাবা চলে গেলেন।
মনোজ বলেন, তাঁর বাবার মৃত্যুর পর, মাত্র ৬ মাসেই মধ্যেই তাঁর মাও চলে গিয়েছিলেন। অভিনেতার কথায় সেটা কঠিন সময় ছিল। অভিনেতা জানান, কীভাবে তাঁর মা, তাঁর বাবার মৃত্যুর পরে, দিল্লি থেকে তাঁদের পৈতৃক গ্রামে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর গ্রামে থাকাকালীনই তাঁর মায়ের পাকস্থলীর ক্যানসার আবারও ফিরে আসে। তাঁকে চিকিৎসার জন্য আবারও দিল্লিতে আনা হয়।
মায়ের কথা মনে করে অভিনেতা বলেন, ‘গ্রামে থাকাকালীনই মায়ের পেটে আবারও ক্যানসার ছড়াতে শুরু করে। আমরা সেটা জানতাম না এবং মাও জানতেন না। মায়ের পেটে পুঁজ তৈরি হতে থাকে এবং নাভি থেকে সেটা বের হতে থাকে। এরপরেও তিনি ইউটিউব ভিডিয়ো দেখে নিজেই নিজের চিকিৎসা করার চেষ্টা করেন। আমার মা ভীষণই শক্ত মনের মানুষ ছিলেন।’
মনে বলেন, ‘ক্যানসার হয়েছে জানতে পরে মা বুঝে যান, এবার তাঁকে তাঁর সন্তানদের উপরই নির্ভারশীল হতে হবে। মা তাই আমার বোনকে বলেন, সে যেন ডাক্তারকে এমন কিছু দিতে বলে, যাতে তিনি সহজেই মারা যেতে পারেন। মা বলেছিলেন তিনি কারোর উপর নির্ভরশীল হতে চান না। বলেন, এর থেকে নাকি মরে যাওয়াই ভালো। এরপর মাও চলে গেলেন। সুতরাং, আমাকেও এভাবেই লালন-পালন করা হয়েছে -যাতে আমরাও কখনও নত না হই, আত্মসমর্পণ না করি, কারোর উপর কখনও নির্ভরশীল না হই শুধু ভদ্র ও বিনয়ী হতে হবে।’