রবীন্দ্রনাথের গানের যাঁরা ভক্ত, তাঁরা সঙ্গীতশিল্পী মনোজ মুরলী নায়ার, এই নামটির সঙ্গে বেশ ভালো করেই পরিচিত। পৈতৃক সূত্রে তাঁর আদি বাড়ি কেরলে হলেও আজ থেকে অনেক বছর আগে এই বাংলাতেই চলে এসেছিলেন শিল্পীর বাবা। তারপর থেকে এখানেই তাঁদের বসবাস। তবে সম্প্রতি হাতের পেশি স্থানচ্যুত হওয়ায় চিকিৎসা করাতে ফের একবার কেরলেই ফিরে গিয়েছিলেন শিল্পী। সেখানেই হয় তাঁর হাতের অস্ত্রোপচার হয়। তারপর থেকে সেখানেই প্রায় ১৭ ছিলেন মনোজ মুরলী নায়ার।
তবে এবার কেরলে ফিরে গিয়েও নিজের সেই পৈতৃক আদি বাড়ি বা তাঁর ঠাকুমার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে গেলেও সেই বাড়িতে আর যাওয়া হল না শিল্পীর। আর সেটা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় আবেগ তাড়িত হয়ে লম্বা পোস্ট করেছেন সঙ্গীতশিল্পী মনোজ মুরলী নায়ার।
কিন্তু কেন ছোটবেলার সেই স্মৃতির গলিতে নেমেও ঠাকুমার বাড়িতে ফেরা হল না শিল্পীর?
আবেগতাড়িত, স্মৃতিতে ভেসে মনোজ মুরলী নায়ার লিখেছেন, ‘বাবার ভিটে মাটির কাছে আমাদের একটা ডেরা হয়েছে..একসময় তস্য গ্রাম ছিল, লোকজনের গায়ে জামাটিও সবসময় থাকত না, কাঁধে ফেলা থাকত, চাষ আবাদই যাদের মূল জীবিকা ছিল। আমার বাবা ১০ বছর বয়সে গৃহত্যাগী, সে কথা আগে বলেছি কখনো, বড় সংসার টানা আর ঠাকুরমার পক্ষে সম্ভব ছিল না তা বাবাকে কলামন্ডলম্ পাঠিয়ে দেওয়া হয় গুরুকূলে (আজকালকার মতো নয় )। কঠিন অধ্যাবসায় ও নিয়মের মধ্যে নিজেদেরকে তৈরি করতে হত। ১৭ বছর বয়সে সেখান থেকে বেরিয়ে দেশ বিদেশ ভ্রমণ করে প্রথমে আমেদাবাদ, তারপর দিল্লি, তারপর পাটনা, অবশেষে শান্তিনিকেতন এলেন পরিবার নিয়ে। আমরা ২ বছরে একবার করে দেশের বাড়ি যেতাম, সবার সাথে দেখা করতে গরমের ছুটিতে। সঙ্গে যেত গরমের ছুটির কাজ (পডাশুনোর কাজ)।’
মনোজ মুরলী থামেননি, তিনি আরও লেখেন, 'আমার মা শহরের মানুষ, বাবা গ্রামের আজকের সমাজে এ এক বিরল সমন্বয় বা সমীকরণ। রামায়ণ নৃতনাট্যে বাবা রাম ও মা সীতা-র ভূমিকায় অভিনয় করেন ও একে অপরের সাথে পরিচিত হন..যদিও মা বলেন বিবাহ নাকি তাদের আয়োজিত বিবাহ ছিল..আমরা ঐ শুনে আজো মুচকি হাসি দিয়ে থাকি। যাক সে কথা।
আমার ভাই ঠিক করল যে সে কেরালাতেই তার জীবন কাটাবে। এখন ঐখানেই কর্মরত। ওর ইচ্ছে হল বাবার সেই গ্রামেরই কাছে ও একটা ঘর বানাবে, বাবা তাঁর ভাগের সবটুকু আমার ছোট পিসিকে দিয়ে দেন সেই অনেক আগেই, আর ঐ ছোট গ্রামের মাটির বাড়ি আর সেই মাটির উনুন, এখন শুধু স্মৃতিতেই রয়ে গেছে..সেই ১০ বছর বয়সে গ্রামের বাড়ি থেকে চলে যাওয়া আমার বাবা আর কখনোই ফিরে যাননি ঐ বাড়িতে স্থায়ী ভাবে থাকতে।'
শিল্পী সবশেষে লিখেছেন, 'আমার এই ১৭ দিনে শুধু একদিন যাওয়া আসার পথে ঐ সেই সরু রাস্তাটুকু দেখলাম যা দিয়ে বেশ একটু উঠলেই সেই ঠাকুমার বাড়ি..সবই বদলে গেছে তাই মনের মধ্যে সেই মাটির বাসাটাকে মুছতে ইচ্ছে হল না। একবার বেরিয়ে গেলে আর ফেরা যায় না যে ! তাই আর যাওয়া হল না ॥'