বাংলাদেশের ছাত্রদের নেতৃত্বে গণ অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট পতন ঘটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়তে হয় তাঁকে।এবার সেই সময়ের একটি অডিও প্রকাশ্যে এসেছে।জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশ জুড়ে গণবিক্ষোভের সময় গুলি করে মানুষ মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি বিবিসির তরফে একটি ফোন কলের অডিও রেকর্ডিং সামনে আনা হয়েছে (অডিওর সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা)। এরপরেই শেখ হাসিনার অডিও নিয়ে বিবিসির রিপোর্টকে উদ্ধৃতি করে আইসিসিতে বিচারের দাবি জানিয়েছে ব্রিটেন ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সম্প্রতি বিবিসি সেই অডিওটির সত্যতা যাচাই করেছে। সেখানে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, 'যেখানেই ওদের দেখবে গুলি করে মারো।' আর এমন অডিও সামনে আসতেই নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ওই অডিও গত ১৮ জুলাইয়ের। সেই সময়ে গণভবন থেকে ফোনে কথা বলছিলেন হাসিনা। এবং এর কয়েক ঘণ্টা পরই দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে সেনার মানের রাইফেল ব্যবহার করা হয়। বিবিসি পুলিশ নথি দেখিয়ে এমনটাই দাবি করেছে।তবে এই অডিওর ফরেনসিক পরীক্ষা হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। রাষ্ট্রসংঘের দেওয়া তথ্য অনুসারে, অন্তত ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল গত বছরের জুলাই ও আগস্টে।
অন্যদিকে, এই অডিও প্রকাশ্যে আসতেই গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাউথ এশিয়া ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয় যে, ওই বিক্ষোভে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছিলেন, যার মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হয়েছেন সামরিক বাহিনীর রাইফেল ও শটগানের গুলিতে। এরমধ্যে ছিল প্রাণঘাতী ধাতব ছররা – যা সাধারণত বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে। আরও হাজার হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। যা তাদের স্বাভাবিক জীবন বদলে দিয়েছে।বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত এই সময়ে সংঘটিত সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলির একটি স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করা। যার পর একটি নিরপেক্ষ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীদের বিচার করা হবে – যাতে যথাযথ প্রক্রিয়াগত সুরক্ষা বজায় থাকে।
অন্যদিকে, জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় কবুল করেছেন প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি এই মামলায় রাজসাক্ষী হতে চান বলেও জানিয়েছেন।বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে তিনি বলেছেন, 'আমি জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।' চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'এই মামলায় আমি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজসাক্ষী হতে চাই।' শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে উসকানি, ষড়যন্ত্র এবং গণহত্যা। তার সরকার পতনের ঠিক আগে তিনি ভারতে চলে আসেন। হাসিনার পাশাপাশি, প্রাক্তন পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তা-সহ ২০৩ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) অভিযুক্ত করেছে, যার মধ্যে ৭৩ জনকে আটক করা হয়েছে। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় শেখ হাসিনা-সহ আওয়ামি লিগের নেতাকর্মীদের ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশকে ফাঁসানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।