কল্যাণীতে পথকুকুরকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছিল। সেই ঘটনায় এবার গ্রেফতার করা হল স্কুলের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও এক কর্মচারীকে। বুধবার রাতে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে। আজ, বৃহস্পতিবার ধৃতদের কল্যাণীর আদালতে তোলা হবে। ঘটনাটি সামনে আসার পর ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
আরও পড়ুন: পাখি মারার বন্দুক দিয়ে কুকুরকে গুলি করে হত্যা, সরব পশুপ্রেমীরা, গ্রেফতার ২
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার বিকেলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, স্কুলের পোশাক পরা একাধিক ছাত্র ও কয়েকজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি মিলে একটি অসুস্থ কুকুরকে নির্মমভাবে লাঠি দিয়ে মারধর করছে। ঘটনাস্থল ছিল একটি মাঠ, সেখানে কুকুরটি প্রায় অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল। সেই অবস্থাতেই তাকে বেধড়ক মারা হয়। এই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঝড় ওঠে সর্বত্র। ঘটনার পরেই কল্যাণী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় পশুপ্রেমী ও সাধারণ মানুষ। দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিও ওঠে। পুলিশের পক্ষ থেকেও তৎপরতা দেখানো হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অভিযুক্তরা সবাই কল্যাণীর নেতাজি বিদ্যামন্দির (ফর বয়েজ) স্কুলের সঙ্গে যুক্ত। কুকুরটিকে মারধরে অভিযুক্তদের মধ্যে ছিলেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌড় ভাওয়াল এবং করণিক তারাপদ দাস।
অভিযোগ, স্কুলের ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে এই নির্মম ঘটনাটি ঘটান অভিযুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী। কুকুরটিকে স্কুল চত্বর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার নাম করে শুরু হয় নির্যাতন। পরবর্তীতে শিক্ষক নিজের ভূমিকা স্বীকার করে একপ্রকার ব্যাখ্যাও দেন। তাঁর দাবি, ওই কুকুরটি দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের আশপাশে ঘোরাঘুরি করত। সাম্প্রতিক সময়ে সেটির ব্যবহার আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিল বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার সারাদিনে বেশ কয়েকজন ছাত্র ও শিক্ষককে কামড়ে দেয় কুকুরটি। তাই বাধ্য হয়ে তাকে তাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পাশের পাড়ার বাসিন্দারা কুকুরটিকে ফের স্কুল চত্বরে পাঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপরই ঘটে মর্মান্তিক ঘটনাটি।
যদিও এই ব্যাখ্যায় কেউই সন্তুষ্ট হননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং এলাকায় প্রবল ক্ষোভ দেখা দেয়। পশুপ্রেমী সংস্থাগুলিও ঘটনার নিন্দা করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। পুলিশ সূত্রে খবর, গোটা ঘটনার ভিডিয়ো ও সাক্ষীদের বয়ান বিশ্লেষণ করেই গ্রেফতার করা হয় দুই অভিযুক্তকে। তদন্তে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য, পথকুকুর হিংস্র হলে প্রশাসনিক নিয়ম মেনে ব্যবস্থা নেওয়ার পথ রয়েছে। কিন্তু এভাবে বাচ্চাদের সামনে দাঁড়িয়ে একটা প্রাণীকে পিটিয়ে মারা অমানবিক ও অপরাধ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে নির্দয়ভাবে পশু হত্যার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে।