মনোনয়ন পর্ব শেষ। রাত পোহালেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির পরবর্তী সভাপতি হচ্ছেন শমীক ভট্টাচার্য। বুধবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব ছিল। দিল্লির নির্দেশে সর্বসম্মতিক্রমে জমা পড়েছে একটিই মনোনয়ন পত্র। শমীক ভট্টাচার্যের নাম প্রস্তাব করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও সমর্থন করেছেন বিদায়ী সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বড়বাজারের পার্টি থেকে রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠার যাত্রাপথে বিজেপির প্রতি পদক্ষেপে উপস্থিত ছিলেন তিনি। ক্ষমতালিপ্সা আর দলবদলের রাজনীতিতে শমীকবাবুরা এখনও তাই যে কোনও দলের সম্পদ।
স্কুল জীবন থেকে দক্ষিণপন্থী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে আসছেন শমীক ভট্টাচার্য। জনসংঘের জমানা থেকে রাজনীতি করছেন তিনি। ৪৪ বছর ধরে প্রতিদিন সমস্ত সাফল্য ব্যর্থতায় নিজের মতাদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি কখনও। অবিচল থেকেছেন লক্ষ্যে। এর পর RSSএ যোগদান করেন তিনি। বিজেপি গঠন হলে যোগ দেন বিজেপিতে। বিজেপিকে যখন বড়বাজারের পার্টি বলা হত তখনও রোজ দলের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন। হাতে গোনা লোক নিয়ে সভা করেছেন। থেমে যাননি কখনও।
বাম জমানায় রাজ্যে বিজেপির ভোট ছিল ১ – ১.৫ শতাংশ। প্রতি ভোটেই জামানত জব্দ হত বিজেপি প্রার্থীদের। তখনও হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদের হয়ে সোচ্চার থেকেছেন। ভোটে লড়ার থেকে সংগঠন ও মতাদর্শের প্রতি নিবিষ্টতার জন্যই তিনি বেশি পরিচিত দলের কর্মীদের কাছে। আর পরিচিত বাংলা শব্দচয়ন, বাগ্মীতা ও তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠস্বরের জন্য।
২০১৪ সালে প্রথমবার ভোটে লড়েন শমীকবাবু। বসিরহাট দক্ষিণ উপ নির্বাচনে জয়ী হন। কিন্তু ২০১৬ সালে ওই আসন থেকেই দীপেন্দু বিশ্বাসের কাছে পরাজিত হন। এর পর ২০১৯ সালে দমদম লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়াই করে সৌগত রায়ের কাছে পরাজিত হন শমীকবাবু। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজারহাট গোপালপুর আসনে অদিতি মুন্সির কাছে পরাজিত হন। ২০২৪ সালে ৪ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপির প্রথম রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন শমীকবাবু।
রাজ্য বিজেপির প্রথম সভাপতি হরিপদ ভারতী থেকে শুরু করে ওই পদে আসীন সবার সঙ্গে কাজ করেছেন শমীকবাবু।
বেশ কয়েক বছর আগে দলের প্রচারে গিয়ে ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনার মুখে পড়েন শমীকবাবু। মাথায় গুরুতর চোট পান তিনি। বেশ কয়েকমাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর কার্যত মৃত্যুমুখ থেকে ফেরেন তিনি। হাসপাতাল থেকে ফিরে সামান্য সুস্থ হয়েই মাথা ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থাতেই বাড়ি থেকে টেলিভিশন চ্যানেলে দলের হয়ে দলের হয়ে গলা ফাটাতে শুরু করেন তিনি। সেই দুর্ঘটনার চিহ্ন এখনও রয়েছে শমীকবাবুর কপালে। সেই শমীকবাবুই এখন রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বে। সামনে লক্ষ্য ২০২৬এর নির্বাচন।