সাইবার অপরাধীদের খপ্পড়ে পড়ে প্রায় ২৫ ঘণ্টা 'ডিজিট্যাল অ্য়ারেস্ট' হয়ে থাকার পর কার্যত 'প্রযুক্তিগত ত্রুটি'র কারণেই মুক্তি পেলেন হায়দরাবাদের এক আইটি কর্মী।
৪৪ বছরের ওই ব্যক্তিকে ভয় দেখানো হয়েছিল এই বলে যে, তিনি নাকি কোনও টাকা পাচারের ঘটনায় যুক্ত রয়েছেন! যা সর্বৈব মিথ্যা। তবে, পুলিশের তৎপরতায় ওই ব্যক্তিকে কোনও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি।
অপরাধের অষ্টপ্রহর শুরু গত ২৬ অক্টোবর ভোর রাতে। যা চলে ২৭ অক্টোবর ভোর পর্যন্ত। কারণ, প্রতারকরা ওই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীকে বলেছিল, তারা মুম্বই পুলিশের আধিকারিক।
সংশ্লিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তারা ওই ব্যক্তিকে একটি ইন্সট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে বারবার ভয়েস কল ও ভিডিয়ো কল করে। শুধু তাই নয়। ওই ব্যক্তি যাতে তাদের সঙ্গে কথা বন্ধ না করেন, তার জন্য তাঁকে ভয় দেখানো হয় এবং কল না কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়!
সোমবার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে একথা জানানো হয়েছে। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুসারে, প্রতারকরা দাবি করে, ওই ব্যক্তি টাকা পাচারে যুক্ত বলে তাদের কাছে খবর রয়েছে। এবং তার জন্য হায়দরাবাদের ওই তথ্য প্রযুক্তি কর্মীর কাছে ৪০ লক্ষ টাকা দাবি করে সাইবার অপরাধীরা!
অবশেষে ২৭ অক্টোবর ভোরে কল ড্রপ হয়ে যাওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি হায়দরাবাদ সাইবার ক্রাইম থানায় খবর দেন এবং বুঝতে পারেন তিনি এক ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদে পড়েছিলেন।
পরবর্তীতে ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানান, ২৫ অক্টোবর রাতে তাঁর মোবাইলে একটি মেসেজ ঢুকেছিল। তাতে দাবি করা হয়, তাঁর মোবাইল নম্বর এবং আধার কার্ডের নম্বর একটি টাকা পাচারের ঘটনায় যুক্ত রয়েছে।
যার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মুম্বই পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছে বলেও ওই মেসেজে দাবি করা হয়। কিন্তু, ওই ব্যক্তি সেই মেসেজটিকে পাত্তা দেননি।
কিন্তু, এরপর ২৬ অক্টোবর ভোর ৩টে নাগাদ সাইবার অপরাধীরা তাঁকে মুম্বই পুলিশের ভেক ধরে ফোন করে এবং একের পর এক ভয়েস ও ভিডিয়ো কলের ফাঁদে ফেলে তাঁকে প্রায় ২৫ ঘণ্টা ধরে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য করে।
ওই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীকে গ্রেফতার করার ভয় দেখানো হয় এবং সবশেষে সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়।
এমনকী, এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তাঁকে বারবার বলা হয়, যাতে তিনি তাঁর পরিবারের সদস্য বা অন্য কাউকে এই ঘটনার কথা না জানান। সেইসঙ্গে, তাঁকে ভুয়ো এফআইআর এবং মামলার নথিও দেখানো হয়।
ভয় পেয়ে সাইবার প্রতারকদের কাছে ব্যাঙ্কে জমা রাখা অর্থের পরিমাণও জানিয়ে দেন ওই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। এরপরই প্রতারকরা তাঁকে তাঁর বাড়ি ছেড়ে কোনও হোটেল বা গেস্ট হাউসে গিয়ে থাকতে বলে।
তাদের দাবি ছিল, ওই ব্যক্তি যদি নিজের বাড়িতে থাকেন, তাহলে পুলিশ তাঁকে সেখান থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। এরপর নিজের টু-হুইলারে চেপে ওই ব্যক্তি প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে একটি লজে গিয়ে ওঠেন।
ওই সাইবার অপরাধীরা এতটাই নৃশংস যে ওই ব্যক্তি যখন গাড়ি চালাচ্ছিলেন তখনও তাঁকে কল কাটার অনুমতি দেয়নি তারা!
শেষমেশ ২৭ অক্টোবর ভোর ৪টে নাগাদ 'কল ড্রপ' হওয়ার কারণে প্রতারকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ওই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর। এরপরই তিনি সাইবার ক্রাইম পুলিশের সাহায্য চেয়ে তাদের ফোন করেন।
এরপর পুলিশ তাঁকে আশ্বস্ত করে এবং মাথা ঠান্ডা রাখতে বলে। পুলিশের এক কনস্টেবল প্রায় একঘণ্টা ধরে তাঁর সঙ্গে লাগাতার কথা বলেন। যাতে তিনি কোনও অঘটন ঘটিয়ে না বসেন।
এরপর ওই ব্যক্তির কাছ থেকে তাঁর এক প্রতিবেশীর মোবাইল নম্বর নিয়ে তাঁকে ফোন করেন ওই কনস্টেবল। সেই ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট লজে যেতে বলা হয়। যাতে তিনি আক্রান্তকে সেখান থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
অন্যদিকে, ভুক্তভোগীকে অবিলম্বে প্রতারকদের নম্বরগুলি ব্লক করতে বলা হয়। তবে, এত কিছুর পরও ওই ব্যক্তি এই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের করতে রাজি হননি।