কলকাতায় ফের গণপিটুনিতে প্রাণ গেল এক যুবকের। চোর সন্দেহে ওই যুবককে মারধর করেন স্থানীয়রা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতের নাম মহম্মদ সিকান্দার। যুবকের মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার সকালে। ঘটনাটি ঘটেছে কড়েয়া থানা এলাকায়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক চোট ছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জেরে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এই ঘটনার পরই পুলিশ খুনের মামলা রুজু করতে আলিপুর আদালতের অনুমতি চেয়েছে।
আরও পড়ুন: লিভ–ইন পার্টনারের সম্মান বাঁচাতে গিয়ে খুন যুবক, বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা নিউটাউনে
অভিযোগ, সিকান্দারকে গত সপ্তাহে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন স্থানীয় যুবক। অভিযোগ, তাঁরা সন্দেহ করেছিল যে সিকান্দার মোবাইল চুরি করেছেন। তুলে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথম দু’দিন ধরে লাগাতার মারধর করা হয় তাঁকে। এরপর ছেড়ে দেওয়া হলেও বিষয়টি নিয়ে কড়েয়া থানায় অভিযোগ করতে যান সিকান্দারের পরিবারের লোকজন। কিন্তু অভিযোগ, সেখান থেকে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
সিকান্দারের বোন জানিয়েছেন, পুলিশ তাঁদের বলে, সিকান্দার একজন মাদকাসক্ত, তাই তাঁর অভিযোগ নেওয়া হবে না। অভিযোগ, এই ঘটনার পর ১৭ জুন ফের একবার সিকান্দারকে তুলে নিয়ে যায় ওই যুবকরা। অভিযোগ, এবার তাঁকে একটি ফ্ল্যাটে আটকে রেখে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করা হয়। পরিবারের দাবি, সিকান্দারের শরীরে ড্রিল মেশিন ব্যবহার করে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। ওইদিন রাতেই পরিবারের সদস্যরা গোপন সূত্রে খবর পেয়ে একটি ফ্ল্যাট থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেন সিকান্দারকে। তাঁকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর কড়েয়া থানায় অভিযোগ জমা দিলে পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিকভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর পর সেই ধারা বদলে খুনের অভিযোগ সংযুক্ত করার জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, কেন প্রথমবার অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি? কেন মাদকাসক্ত বলে অভিযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হল? নির্বিচারে গণপিটুনির এই ঘটনায় ফের একবার পুলিশের ভূমিকা ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন। শহরের বুকে চোর সন্দেহে মানুষ তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর এবং সেই ঘটনার জেরে মৃত্যু। উল্লেখ্য, দুদিন আগেই বেহালার পর্ণশ্রীতে রাজস্থানের দুই ব্যবসায়ীকে গণপিটুনির অভিযোগ উঠেছিল। তার ফলে মৃত্যু হয়েছিল এক ব্যবসায়ীর।