'আপনাদের কাজ এখানে সমস্যা নয়, সমস্যা সময় নিয়ে।’ নির্বাচন কমিশনের বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে এমনই পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। আইনত এমন পদক্ষেপ করার অধিকার আছে কমিশনের। কিন্তু যে সময়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে, তা প্রশ্নের উদ্রেক ঘটাচ্ছে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সম্প্রতি বিহারের ভোটার তালিকায় সংশোধন নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। বৃহস্পতিবার সেগুলি একত্র করে শুনানি শুরু হয়েছে বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে।শুধু তাই নয়, বিহার দিয়ে শুরু হলেও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে জেতাতেই ভোটার তালিকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মহুয়া নিজেও আদালতে মামলা করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ করা সমস্যার বিষয় নয়। সমস্যা তা কার্যকর করার সময় নিয়ে।’
আরও পড়ুন-হাই হিলসের মধ্যে কোকেন! হায়দরাবাদে 'সফিস্টিকেটেড’ মাদক চক্র ফাঁস
এদিন শুনানিতে বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, 'ভোটার তালিকা সংশোধন করায় কোনও অন্যায় নেই। কিন্তু নির্বাচনের ঠিক মুখে একজন ভোটারকে অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হচ্ছে, নিজের সপক্ষে সওয়াল করার যথেষ্ট সময় পর্যন্ত তাঁর হাতে নেই।' অন্যদিকে আদালতে সওয়াল জবাব চলাকালীন আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ জানান, এক দশকের বেশি সময় ধরে যাঁরা ভোটার, তাঁদের নিজেদের বৈধতা প্রমাণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত স্বৈরাচারী এবং বৈষম্যমূলক। শুধু তাই নয়, বৈধ ভোটার হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করার ক্ষেত্রে কেন আধার কার্ড এবং কমিশনের নিজের ভোটার কার্ড প্রমাণপত্র হিসেবে গ্রাহ্য হবে না, সেই প্রশ্নও ওঠে। শঙ্করনারায়ণ বলেন, 'কমিশন বলছে, ২০০৩ সালের আগে হলে বৈধ নাগরিক। কিন্তু ২০০৩ সালের পরে হলে নয়। পাঁচ নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকলেও, তা আপনার নাগরিক হওয়ার প্রমাণ নয়।'
এদিন বিচারপতি ধুলিয়া আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছেন?’ জবাবে আইনজীবী জানান, তিনি নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাকে নয়, এর পন্থা যা বিহারের ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে, তাকে চ্যালেঞ্জ করছেন।পাশাপাশি বৈধ ভোটার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে আধার কার্ড কেন প্রমাণপত্র হিসেবে গ্রাহ্য হবে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে শীর্ষ আদালত। এতে কমিশনের প্রতিনিধি জানান, আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। জবাবে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, সেটা সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়। বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে, কমিশনের এক্তিয়ারের মধ্যে নয়। কমিশনের তরফে ভোটার তালিকা সংশোধনে স্থগিতাদেশ না দেওয়ার আবেদন জানানো হয় আদালতে। আদালত চাইলে, চূড়ান্ত হওয়ার আগে সংশোধিত ভোটার তালিকা দেখতেও পারে বলে জানানো হয়।
আরও পড়ুন-হাই হিলসের মধ্যে কোকেন! হায়দরাবাদে 'সফিস্টিকেটেড’ মাদক চক্র ফাঁস
মামলাকারীদের আরেক আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতে জানান, বিহারের পরে একই ঘটনা ঘটবে পশ্চিমবঙ্গেও। একজন যোগ্য ভোটারও যদি ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন, তা হলে গণতন্ত্রের উপরে আঘাত পড়বে। সকলে সমান সুযোগ পাবেন না। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, বড্ড তাড়াতাড়ি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করছে আদালত। তবে মৌখিক ভাবে হলেও আদালত জানায়, ভোটার তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পরই নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যায়। নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গেলে, আদালত হস্তক্ষেপ করত না।মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী শুক্রবার।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন হবে। তার আগে বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) নির্দেশ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।নির্বাচন কমিশন জানায়, ২০০৩-এর ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের সমস্যা নেই। কিন্তু বাকিদের মধ্যে যাঁদের জন্ম ১৯৮৭ সালের আগে, তাঁদের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে।এরপরেই কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা দায়ের হয়। মামলা করেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, অসরকারি সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম্স, পিইউসিএল। মামলা করেছেন আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা, এবং সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদব।