চিন্নস্বামী স্টেডিয়ামের কাছে পদপিষ্টের ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেইসঙ্গে ৩৩ জন আহত হয়েছেন বলেও স্বীকার করে নিলেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এম সিদ্দারামাইয়া। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি জানিয়েছেন, বেঙ্গালুরুতে যে ঘটনা ঘটেছে; তা বিরাট কোহলি, রজত পতিদারদের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) আইপিএল জয়ের আনন্দকে বেদনায় পরিণত করেছে। যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশেরই বয়স বেশি নয়। মৃতদের পরিবারপিছু ১০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। কিন্তু এরকম যে পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা কল্পনাও করা যায়নি। কারণ কেউ ভাবতেই পারেননি যে এত মানুষ আসতে পারেন। আরসিবির ট্রফি জয়ের উৎসবে সামিল হতে শুধু চিন্নস্বামী স্টেডিয়ামের কাছেই দু'তিন লাখ মানুষ এসেছিলেন। তারইমধ্যে স্টেডিয়ামে যে ছোট গেট ছিল, সেটা সমর্থকরা ভেঙে দেন। আর তার জেরেই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ম্যাজেস্ট্রিট পর্যায়ের তদন্ত করা হবে। সেজন্য ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী।
দায়ভার এড়ানোর চেষ্টা রাজ্য সরকারের?
আর যে বিপর্যয় ঘটেছে, সেটাকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন না বলে দাবি করেও ঘটনার দায়ভার কর্ণাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সিদ্দারামাইয়া। তিনি বলেছেন, ‘কর্ণাটক সরকারের দায়িত্ব ছিল সুরক্ষা প্রদান করা। বাকি সবকিছু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে সামলাতে হয়।’ সেইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘পদপিষ্টের ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করছে বিজেপি। আমি রাজনীতি করতে চাই না।’
আয়োজনে খামতি ছিল, সাফ কথা বোর্ডকর্তার
তবে পুরো বিজয় উৎসবের আয়োজনের ক্ষেত্রে যে বড়সড় খামতি ছিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই সংশ্লিষ্ট মহলের। সংবাদসংস্থা পিটিআইকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া বলেছেন, 'অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটল। এটাই জনপ্রিয়তার নেতিবাচক দিক। ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত মানুষ। আয়োজকদের আরও ভালোভাবে পুরো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা উচিত ছিল।'
সরাসরি আরসিবি ম্যানেজমেন্ট বা কর্ণাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ঘাড়ে বন্দুক না চাপালেও বোর্ডের সচিব আরও বলেছেন, 'যখন কেউ এরকম মাত্রার বিজয় উৎসবের আয়োজন করেন, তখন উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। করতে হয় সুরক্ষা সংক্রান্ত উপযুক্ত পদক্ষেপ। কোথাও তো কোনও গাফিলতি থেকে গিয়েছে।'
কলকাতা বা মুম্বইয়ে তো এরকম বিজয় উৎসব হয়েছিল, মনে করালেন বোর্ডকর্তা
আর সেই প্রসঙ্গে গত বছর ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পরে মুম্বইয়ে টিম ইন্ডিয়ার ভিকট্রি প্যারেড বা অতীতে কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সেলিব্রেশনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বোর্ডের সচিব। দুটি ক্ষেত্রেই রাস্তার মধ্যে দিয়ে বিজয় উৎসব করা হয়েছিল। আর রাস্তায় কাতারে-কাতারে মানুষ ভিড় করেছিলেন।
আরও পড়ুন: বিরাটের সঙ্গে IPL ‘ট্রফি ধরে’ বাবা! ভিডিয়ো দেখে কাঁদল সবাই, ছেলের জয়ে চোখে জল মায়ের
সেই রেশ তিনি বলেছেন, 'অতীতেও আইপিএল জয়ের পরে সেলিব্রেশন হয়েছে। যেমন গত বছর কেকেআর জেতার পরে কলকাতায় (বিজয় মিছিল) হয়েছিল (২০২৪ সালে সেরকম কিছু না হলেও ২০১২ সালে কেকেআর আইপিএল জয়ের পরে বিজয় মিছিল হয়েছিল)। কিন্তু সেখানে কিছু হয়নি। আমরা যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিলাম, তখনও সবকিছু সুরক্ষিতভাবে হয়েছিল। মুম্বইয়ে জনসমুদ্র নেমে এসেছিল। কিন্তু কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।'
আরও পড়ুন: ভারতের এই বাড়িতে ১১ বছরে ৯টি IPL ট্রফি ঢুকেছে! ফাইনালে ইতিহাসও গড়লেন ১ সদস্য
গা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা আরসিবির?
যদিও পুরো ঘটনা থেকে গা বাঁচাতে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে আরসিবি কর্তৃপক্ষ। এমনিতেই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে যেভাবে চিন্নস্বামীর ভিতরে উৎসবে মেতেছিল আরসিবি, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। সেই পরিস্থিতি অব্যবস্থাপনার যে অভিযোগ নিয়ে একটাও শব্দ খরচ না করে আরসিবির মুখপাত্র পুরোটা সমর্থকদের আবেগ নিয়ে কথা বলে গা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন।
আরও পড়ুন: ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে খেলার লোক নই আমি, IPL জিতেই বললেন বিরাট, নিশানায় রোহিত?
তারইমধ্যে সেই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, 'বেঙ্গালুরুতে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। এই শোকের মুহূর্তে মৃতদের পরিজনদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।'