একেই বলে নিখুঁত প্রতিশোধ! এক ঝটকায় ২০২৩ সালের দুঃস্বপ্নকে দূর করলেন কেএল রাহুল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-র প্রথম সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। এই ম্যাচে কেএল রাহুলের ব্যাটে এসেছিল উইনিং শট। ছক্কা মেরে ম্য়াচ জিতিয় গর্জে উঠলেন ভারতীয় দলের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। ম্যাচ জিতিয়ে কেএল রাহুল যখন ব্যাট উঁচিয়ে আগুন জ্বলা চোখে প্রতিপক্ষ ও সমালোচকদের দেখলেন তখন সকলের ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা মনে পড়ে গেল।
১৯ নভেম্বর ২০২৩, নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম। এই ম্যাচে স্কোরবোর্ডে ভারত ২৪০ রানে অলআউট হয়ে যায়। এর জবাবে অস্ট্রেলিয়া ২৪১/৪ রান তোলে। এই ম্যাচে সমালোচনার মুখে পড়েছিলন কেএল রাহুল। তাঁর ১০৭ বলে ৬৬ রানের ইনিংস, সেই বিশ্বকাপে করা সবচেয়ে ধীরগতির ফিফটি ছিল। এই কারণেই কেএল রাহুল ভক্তদের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন।
এই সময়ে সমালোচকরা তাকে ভীরু বলেন। ভক্তরা তাকে কাপুরুষ আখ্যা দেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার স্ট্রাইক রেট বিশ্লেষণ করা হয়, যেন কোনও বড় অপরাধ করে ফেলেছিলেন কেএল রাহুল। কেউ গুরুত্ব দিল না যে, তিনি ভেঙে পড়া ইনিংসকে সামলেছিলেন। কেউ মনে রাখল না যে, ভারতের বিখ্যাত টপ অর্ডার মাত্র ৮১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। তারপর ইনিংস সামলেছিলেন কেএ রাহুল। প্রায় দুই বছর পরে সেই সমালোচনার জবাব নিজের ব্যাট দিয়েই দিলেন কেএল রাহুল।
আরও পড়ুন … ভিডিয়ো: এমনটা করার কি কোনও দরকার ছিল… মাঠেই বিরাট কোহলির উপর রেগে গেলেন কেএল রাহুল
২০২৫ সালের ৪ মার্চ, দুবাই-এর মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে জবাব দিলেন কেএল রাহুল। এই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ২৬৪ রান তোলে। ভারতের শুরুটা হয়েছিল নড়বড়ে। রোহিত ২৮, গিল ৮ রানে আউট হন। কোহলি ৮৪ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন, শ্রেয়স আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ গড়েন। কিন্তু ৪৩তম ওভারে, ২২৫/৫ স্কোরে আবারও সেই পুরনো দুঃস্বপ্ন ফিরে আসে।
আরও পড়ুন … ভিডিয়ো: আম্পায়ারকে প্রায় হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন রোহিত! বেঁচে গিয়ে বড়-বড় করলেন চোখ-মুখ
হার্দিক পান্ডিয়া দ্রুত ২৮ রান করে সমীকরণ সহজ করেন, কিন্তু ২৫৯-৬ স্কোরে আউট হন। তখনও ম্যাচ জিততে ভারতের প্রয়োজন ছিল ১২ বলে ৪ রান। এই সময়ে যখন কেএল রাহুলের পুনর্জন্ম হয়। রাহুল, অপরাজিত ৩৬ রানে খেলছিলেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অফস্টাম্পের বাইরে বল করেন। রাহুল বলের লাইনে গিয়ে দারুণ টাইমিংয়ে ঘূর্ণির সঙ্গে শট খেললেন। বল উড়ে যায় সীমানার বাইরে। ভারত তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে যায়।
আরও পড়ুন … গিলের হাতে MRF-এর ব্যাট! শুভমন কি কোহলির ব্যাট নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন? সামনে এল আসল কারণ
ম্যাচ শেষের পর জাদেজা ছুটে এসে কেএল রাহুলকে জড়িয়ে ধরেন। রাহুল শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, আর তার মুখ থেকে বেরিয়ে এল একটি নীরব গর্জন। যেটা যন্ত্রণা ও গর্বের মিশ্রণ ছিল। যে হাত একসময় কাপুরুষতার অভিযোগ শুনেছিল, সেই হাতই আজ ভারতের জয় লিখল। দুবাইয়ের আকাশ আতশবাজিতে আলোকিত হলো, আর পরাজিত অস্ট্রেলিয়া মাঠ ছাড়ল। কেএল রাহুলের সেই ছক্কা শুধু ম্যাচই জেতায়নি, একটি অধ্যায়েরও সমাপ্তি টেনেছে।যেই ছেলে, যে একদিন জাতির কান্নার কারণ হয়েছিল, আজ সেই হিরো হয়ে উঠল, যে তাদের চোখে আনন্দের অশ্রু এনে দিল।