হেডিংলেতে ৩৭১ রানের পুঁজিও রক্ষা করতে পারল না ভারত। বরং টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে যা কখনও হয়নি, সেই লজ্জার মুখে পড়তে হল টিম ইন্ডিয়া। কখনও কোনও দল একটি টেস্টে পাঁচটি ব্যক্তিগত শতরানের পরে সেই ম্যাচটা হেরে যায়নি। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে পাঁচ উইকেটে হেরে গিয়ে সেই লজ্জার মুখে পড়লেন শুভমন গিলরা। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে গেলেন। আর ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচে গিলকেও বেশ সাধারণ মানের লেগেছে। বিশেষত পঞ্চম দিনে তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। যেখানে ইংরেজ ব্যাটাররা শট মারছিলেন, তার পরের বলটার জন্য ঠিক সেখানেই ফিল্ডার আনছিলেন। তিনি যেন বলকে অনুসরণ করছিলেন। আর তাঁকে সাহায্য করেননি বোলার এবং ফিল্ডাররা। বিশেষত ফিল্ডারদের হাতে যেন বাটার লাগানো ছিল। ম্যাচে কমপক্ষে সাতটি টেস্ট ফস্কে দিয়েছেন। আর সেটার পুরো ফালদা নিয়েছে ইংল্যান্ড।
বুমরাহ-সিরাজ ভালো শুরু করলেও ডোবান প্রসিধরা
অথচ হাতে ৩৫০ রান নিয়ে এবং ইংল্যান্ডের ১০ উইকেট তোলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে পঞ্চম দিনের শুরুটা ভালো করেন ভারতীয় বোলাররা। জসপ্রীত বুমরাহের সঙ্গে মহম্মদ সিরাজকেও ছন্দে লাগছিল। কিন্তু মেঘলা আকাশের নীচে সেরকম সহায়তা পাননি ভারতীয় বোলাররা। তারপরও বেন ডাকেট এবং জ্যাক ক্রলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন বুমরাহরা।
আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডের মাটিতে ব্যাট হাতে দাপট তিলক বর্মার, শতরানের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ভারতীয় তারকা
কিন্তু প্রসিধ কৃষ্ণ এবং শার্দুল ঠাকুর আসার পরই হাত খোলেন ইংরেজ ওপেনাররা। প্রতি ওভারে নিয়ম করে বাজে বল পেতে থাকেন। ফলে ওভারপিছু ছয়ের উপরে রান তুলতে থাকেন তাঁরা। রবীন্দ্র জাদেজাও ঠিক সুবিধা করতে পারেননি। বিশেষত ডাকেট তো তাঁকে একইরকম ধাঁচে রিভার্স সুইপ করে মারতে থাকেন। অথচ একই বল করে যেতে থাকেন ভারতীয় তারকা। তাঁকে পুরোপুরি শাসন করেন ডাকেট।
যশস্বীর ক্যাচ মিসের প্রদর্শনী, বাজে ফিল্ডিং ভারতের
তারইমধ্যে সিরাজ কয়েকটা দুর্দান্ত বল করলেও ভাগ্যের সহায়তা পাননি। ব্যাটের কাণায় একচুল দূর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল বল। আর যখন ফিল্ডারের হাতে বল যায়, তখন ক্যাচ ফস্কে দেন যশস্বী জয়সওয়াল। যিনি প্রথম ইনিংসে শতরান করেও এই টেস্টের স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে চাইবেন। কারণ হেডিংলে টেস্টে চারটি ক্যাচ ফেলে দেন।
আর ডাকেটের ক্যাচটা যখন ফেলেন, তখন ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল বিনা উইকেটে ১৭২ রান। আর ৯৭ রানে খেলছিলেন ডাকেট। সেখান থেকে ১৪৯ রান করে যান ইংরেজ ওপেনার। আর ইংল্যান্ডের প্রথম উইকেট পড়ে ১৮৮ রানের মাথায়। ৬৫ রানে ক্রলিকে আউট করে প্রসিধ। ১৮ রান যোগ হতে না হতেই ওলি পোপকে ফিরিয়ে দেন। তারপর ডাকেট এবং রুট মিলে ইংল্যান্ডকে টানতে থাকেন। কিন্তু ৫৫ তম ওভারের তৃতীয় এবং চতুর্থ বলে যথাক্রমে ডাকেট এবং হ্যারি ব্রুককে আউট করে ভারতের আশা জিইয়ে রাখেন শার্দুল ঠাকুর।
আরও পড়ুন: বল বদল বিতর্কে মেজাজ হারালেন গিল, সিরাজ! এরপরেই আম্পায়ারকে জাদেজার যোগ্য জবাব
ভারতকে অবশ্য সেই ছন্দ ধরে রাখতে দেননি বেন স্টোকস এবং জো রুট। আর জঘন্য ফিল্ডিং করে তাঁদের কাজ যতটা সহজ করা যায়, সেটাই করতে থাকেন ভারতীয়রা। শেষপর্যন্ত ইংল্যান্ড ৩০০ রানের গণ্ডি পার করার পরে তাঁদের ৪৯ রানের জুটি ভাঙেন জাদেজা। স্টোকস যখন আউট হন, তখন জয়ের জন্য দরকার ছিল ৬৯ রান।
ভারত-ইংল্যান্ডের প্রথম টেস্টের সংক্ষিপ্ত স্কোর
১) ভারত: ৪৭১ রান (শুভমন গিল ১৪৭ রান) এবং ৩৬৪ রান (কেএল রাহুল ১৩৭ রান)।
২) ইংল্যান্ড: ৪৬৫ রান (ওলি পোপ ১০৬ রান) এবং ৫ উইকেটে ৩৭৩ রান (বেন ডাকেট ১৪৯ রান)।
চতুর্থ ইনিংসে ভারতের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রান
১) বেন ডাকেট: ১৪৯ রান, হেডিংলে, ২০২৫ সাল।
২) জো রুট: অপরাজিত ১৪২ রান, এজবাস্টন, ২০২২ সাল।
৩) ফাফ ডু'প্লেসি: ১৩৪ রান, জোহানেসবার্গ, ২০১৩ সাল।
৪) দিলীপ মেন্ডিস: ১২৪ রান, ক্যান্ডি, ১৯৮৫ সাল।
৫) ড্যারিল কুলিনান: অপরাজিত ১২২ রান, জোহানেসবার্গ, ১৯৯৭ সাল।
ইংল্যান্ডে টেস্টে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়
১) ৪০৪ রান: ইংল্যান্ডকে সাত উইকেটে হারিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, ১৯৪৮ সাল, হেডিংলে।
২) ৩৭৮ রান: ভারতকে সাত উইকেটে হারিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ড, ২০২২ সাল, বার্মিংহাম।
৩) ৩৭১ রান: ভারতকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে দিল ইংল্যান্ড, ২০২৫ সাল, হেডিংলে।
৪) ৩৫৯ রান: অস্ট্রেলিয়াকে এক উইকেটে হারিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ড, ২০১৯ সাল, হেডিংলে।
ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের বাকি ম্যাচের সূচি
১) দ্বিতীয় টেস্ট: ২ জুলাই, বার্মিংহাম।
২) তৃতীয় টেস্ট: ১০ জুলাই, লর্ডস।
৩) চতুর্থ টেস্ট: ২৩ জুলাই, ম্যাঞ্চেস্টার।
৪) পঞ্চম টেস্ট: ৩১ জুলাই, ওভাল।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিল
১) ইংল্যান্ড: ১২ পয়েন্ট।
২) শ্রীলঙ্কা: ৪ পয়েন্ট।
৩) বাংলাদেশ: ৪ পয়েন্ট।
৪) ভারত: ০ পয়েন্ট।