নিজের মাঠে ফিরলেন বিরাট কোহলি, ফের দিল্লির সতীর্থদের সঙ্গে অনুশীলন করলেন, কাটালেন বিশেষ মুহূর্ত। ঠিক সকাল ৯টায়, যখন তার জেট ব্ল্যাক পোর্শে ফেরোজ শাহ কোটলা মাঠের ‘বীরেন্দ্র সেহওয়াগ গেট’ দিয়ে প্রবেশ করলেন, তখন তা ছিল দিল্লির নিজস্ব তারকা বিরাট কোহলির জন্য এক আবেগঘন প্রত্যাবর্তন। দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় পর আবার প্রথম শ্রেণির দলের সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দিলেন বিরাট কোহলি।
পেসার নভদীপ সাইনিকে বাদ দিলে, দিল্লির বর্তমান স্কোয়াডের বাকি ১৮ জন খেলোয়াড় শুধু টেলিভিশনেই বিরাট কোহলিকে দেখেছেন। তারা হয়তো শুনেছেন কীভাবে ‘চিকু’ থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন ভারতের ক্রিকেটের ‘কিং’। গত ১৫ বছরে দিল্লির 'চিকু' স্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়েছিল, কারণ তিনি তখন বিশ্বের অন্যতম বড় ক্রিকেট ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছিলেন।
সোমবার, তিনি প্রায় তিন ঘণ্টা তার হোম গ্রাউন্ডে কাটান, যেখানে তার আশেপাশের সকলেই যেন মুগ্ধ হয়ে তাকে অনুসরণ করছিলেন। তরুণ খেলোয়াড় থেকে শুরু করে প্রধান কোচ শরণদীপ সিং ও ব্যাটিং কোচ বান্তু সিং—সকলেই যেন তার কাছে থাকার সুযোগ পেতে চাইছিলেন।
আরও পড়ুন… ফের মাঠে নামবে আফগানিস্তানের মহিলা ক্রিকেট দল! মেলবোর্নে খেলবে ঐতিহাসিক প্রদর্শনী ম্যাচ
যদিও তিনি সকলের প্রতি ভদ্রতা দেখিয়েছেন, তবে সবচেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলেন তার প্রাক্তন অনূর্ধ্ব-১৯ কোচ মহেশ ভাটির সঙ্গে। যিনি এখন দিল্লি দলের প্রশাসনিক ম্যানেজার। একজন সিনিয়র ডিডিসিএ কর্মকর্তা পিটিআইকে বলেন, ‘সে বদলায়নি। ছোলে-পুরি তার খুব পছন্দের খাবার, তাই আমরা তার জন্য তা মজুদ রেখেছিলাম, কিন্তু সে বলল, ‘ছোলে-পুরি খাব না’।’
তবে, ১২ বছর পর রঞ্জি ট্রফিতে ফেরার আগে পুরোনো একটি প্রিয় খাবারের স্বাদ নিতে ভুললেন না বিরাট কোহলি। সেই কর্মকর্তা জানান, ‘প্র্যাকটিসের পর পুরোনো দিনের মতোই সকলের সঙ্গে কাড়ি-চাওয়াল খেলেন।’ কোহলি আশার পরে দিল্লির অনুশীলনে 'বিরাট' প্রভাব দেখা গেল। কোহলির প্রত্যাবর্তন যেন এক বিশেষ ইভেন্টে পরিণত হয়েছিল। সাধারণত রঞ্জি ট্রফির ম্যাচ কেবল কিছু গুটিকয়েক ক্রিকেট অনুসারীই কভার করেন, কিন্তু সোমবার সেই সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
আরও পড়ুন… নীরজের মত আরও সোনার ছেলে তুলে আনতে প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জ্যাভেলিন থ্রোয়ারকে কোচ করল ভারত
নেতৃত্বস্থানীয় কোচ শরণদীপ সিং ও ব্যাটিং কোচ বান্তু সিং সারাক্ষণ তার পাশে ছিলেন, এমনকি ফটোগ্রাফার বা ভিডিয়োগ্রাফারদের জন্যও তাদের ফ্রেম থেকে বাদ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। ডিডিসিএ সচিব অশোক শর্মা, যিনি ‘মামা’ নামে পরিচিত, তিনি বলেন, ‘২০০৬-০৭ সালে দিল্লি রঞ্জি দলের তৎকালীন ম্যানেজার অজিত চৌধুরীই তাকে ‘চিকু’ ডাকনাম দিয়েছিলেন।’
তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য এটি স্মরণীয় দিন হলেও, কোহলির জন্য এটি ছিল কেবলমাত্র নিয়মিত অনুশীলনের আরেকটি দিন। ৩৫ মিনিটের ওয়ার্ম-আপের মধ্যে ছিল ১৫ মিনিটের ফুটবল খেলা এবং কিছু স্প্রিন্ট অনুশীলন। এরপরই শুরু হয় ব্যাটিং অনুশীলন। নেট সেশনে প্রবেশ করে তিনি প্রথমে দিল্লির অধিনায়ক আয়ুষ বাদোনিকে ব্যাট করতে বললেন, ‘আয়ুষ, তুমি ব্যাটিং করো, তারপর আমরা দুজন ব্যাটিং বদল করব।’
আরও পড়ুন… SL vs AUS 1st Test: শ্রীলঙ্কায় অন্য ভূমিকায় মাঠে নামবেন ট্র্যাভিস হেড! কী ইঙ্গিত দিলেন স্টিভ স্মিথ?
প্রথমে তিনি থ্রো-ডাউন নিয়ে পুল শট অনুশীলন করেন, তারপর বাঁ-হাতি স্পিনার হর্ষ ত্যাগী ও সুমিত মাথুরের বিরুদ্ধে ব্যাট করলেন। পেসার নভদীপ সাইনি, মনি গ্রেওয়াল, রাহুল গেহলট ও সিদ্ধান্ত শর্মার বিরুদ্ধে ব্যাট করলেও খুব একটা সমস্যায় পড়েননি। এই সময়ে তরুণদের জন্য বিশেষ বার্তা দেন বিরাট কোহলি। এক চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী, কবির, তার বাবার পুরোনো বন্ধু কোহলির জন্য একটি স্কেচ বানিয়ে নিয়ে এসেছিল।
কোহলির সঙ্গে সাক্ষাতে কবির জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আমি কীভাবে ভারতের হয়ে খেলতে পারি?’ উত্তরে কোহলি বললেন, ‘তুমি কঠোর পরিশ্রম করবে। এটা এমন হওয়া উচিত নয় যে তোমার বাবা তোমাকে বলছে অনুশীলনে যেতে। বরং তোমার বাবাকে তুমি নিজেই বলবে, ‘আমি অনুশীলন করতে যেতে চাই’।’ আর দিল্লির তরুণ খেলোয়াড়দের উদ্দেশে কোহলির পরামর্শ ছিল একদম তার নিজস্ব স্টাইলে, ‘দিল্লিওয়ালে হো, দম দিখাও! শুরুতে ভালো খেলো, তারপর ঢিলে পড়ে যেও না। ইতিবাচক ক্রিকেট খেলো, দিল্লিওয়ালেদের মতো!’