ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় শুধু একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদই ছিলেন না, ছিলেন একজন কিংবদন্তী চিকিৎসকও। অনেকে যাকে 'ধন্বন্তরি' উপাধি দিয়েছিলেন। তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যতিক্রমী বলেই সেই সময়ের অন্যতম বিখ্যাত চিকিৎসক তিনি। এই বিধান রায়কে নিয়ে কিন্তু কম কিংবদন্তী প্রচলিত ছিল না! এর কিছু যেমন সত্যি, আবার কিছু মিথ্যেও হতে পারে। বিধান রায়ের জন্মদিনে সেই কিংবদন্তীগুলিই আরেকবার ফিরে দেখা।
মুখ দেখেই বুঝে যেতেন রোগ, সিদ্ধান্ত নিতেন নির্ভুল
ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় তার রোগ নির্ণয়ের অবিশ্বাস্য ক্ষমতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। অনেকে বলতেন তাঁর দিব্যদৃষ্টি ছিল! তিনি কেবল রোগীর শারীরিক লক্ষণ দেখেই নয়, রোগীর মুখভঙ্গি, চোখের দিকে তাকিয়ে এবং তাঁদের কথা শুনেই রোগ ধরতে পারতেন। এই ক্ষমতা এতটাই প্রবাদপ্রতিম ছিল যে, দেশ-বিদেশ থেকে তাঁর কাছে রোগী আসতেন। মহাত্মা গান্ধী থেকে জওহরলাল নেহেরু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা গান্ধী – বহু স্বনামধন্য ব্যক্তি তাঁর চিকিৎসা পেয়েছেন।
ওষুধ ছাড়াই কখনও কখনও চিকিৎসা
তাঁর চিকিৎসার সবথেকে স্বতন্ত্র দিক ছিল যতটা সম্ভব ওষুধ কম দিয়ে চিকিৎসা করা। কখনও কখনও , সম্ভব হলে ওষুধ না দিয়েই চিকিৎসা করতেন তিনি। প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানে বিশ্বাস রাখতেন। তাই দিয়েই বহু রোগীর মন জয় করতেন। তাঁর মতে, রোগ সারাতে হাসিমুখ খুব জরুরি। তিনি মনে করতেন, রোগীর মানসিক শান্তি এবং আত্মবিশ্বাসই আরোগ্যের প্রধান চাবিকাঠি।
ছাতিম গাছের পাতা থেকে কুইনাইন
একটি বিখ্যাত ঘটনা থেকে তাঁর উদ্ভাবনী ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়। অবিভক্ত ভারতের পূর্ব পাকিস্তানের এক বিখ্যাত জমিদারের পুত্রবধূ তখন অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাজারে কুইনাইন দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী কিনে নিয়েছিল সব। তখন বিধান রায় ছাতিম গাছের পাতা থেকে বড়ি তৈরি করতে বলেন। এই বড়ি অনেকটা কুইনাইনের মতোই কাজ করে বহু ম্যালেরিয়া রোগীকে সারিয়ে তুলেছিল।
গরিব-দুঃখীদের প্রতি বিশেষ যত্ন
ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকল রোগীর তিনি চিকিৎসা করতেন। গরিব রোগীদের জন্য ফি নিতেন না। বরং তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। তাঁর কাছে সাহায্য চেয়ে কেউ খালি হাতে ফিরেছেন, এমন ঘটনা বিরল। তাঁর এক কলমের লেখাতেই বহু গরিব মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা ওষুধ পাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যেত।