পুরীর রথগুলি বিশাল আকারের। প্রতিটি রথের ওজন চল্লিশ টনেরও বেশি। এই বিপুল ওজনের রথগুলোকে টেনে নিয়ে যাওয়া এবং নির্দিষ্ট স্থানে থামানো এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। ঐতিহ্যগতভাবে রথ থামানোর জন্য প্রধানত দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু রথ থামানোর সময় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতেন অনেকে।
ভক্তদের প্রচেষ্টায়
লক্ষ লক্ষ ভক্ত বিশাল দড়ি দিয়ে রথ টেনে নিয়ে যান। রথ থামানোর প্রয়োজন হলে, সবাই মিলে দড়ি টেনে গতি কমানোর চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে রথের নিচে কাঠের গুঁড়ি বা বড় বড় পাথর ব্যবহার করে চাকার গতি রোধ করার চেষ্টা করা হয়। এটি মূলত ঘর্ষণ বলের বিজ্ঞানকে কাজে লাগায়। চাকার নিচে ভারী ও অমসৃণ বস্তু রেখে চাকা ও মাটির মধ্যে ঘর্ষণ বাড়িয়ে গতি কমানো হয়।
কাঠের গুঁড়ি দিয়ে
অতীতে রথের চাকায় সরাসরি কাঠের লগ বা গুঁড়ি ঠেকিয়ে ব্রেক করা হতো। এই পদ্ধতিতে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকত, কারণ রথের বিপুল গতির কারণে কাঠের গুঁড়ি সরে যেতে পারত বা মানুষ আহত হতে পারত। এটিও ঘর্ষণ নীতিতেই কাজ করে, কিন্তু এর কার্যকারিতা এবং সুরক্ষা তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
আধুনিক পদ্ধতি
সম্প্রতি, রথযাত্রাকে আরও নিরাপদ করার জন্য আধুনিক ব্রেকিং সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে। একজন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার অশ্বিন কুমার মিশ্র এই ব্রেকিং সিস্টেমটি ডিজাইন করেছেন। এটি মূলত একটি উন্নত ব্রেকিং সিস্টেম। এই সিস্টেমে মোটা রাবারের শিট ব্যবহার করা হয়, যা তুলা এবং নাইলনের স্তর দিয়ে শক্তিশালী করা হয়। এই রাবার শিটগুলি বিশেষ নকশার বড় পেরেক দিয়ে তৈরি কাঠের লগ (ব্রেক শু) এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
কীভাবে কাজ করে ব্রেক
এই ব্রেক শু-গুলিকে চাকার সামনে রাখা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চাকার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। রাবারের শিট এবং ইস্পাতের পেরেক রাস্তার সঙ্গে শক্তিশালী ঘর্ষণ তৈরি করে, যার ফলে রথের গতি কমে আসে এবং রথ নির্দিষ্ট স্থানে থামে। রাবার শক অ্যাবজার্বার হিসেবেও কাজ করে, যা রথের গতি হঠাৎ কমানোর সময় ঝাঁকুনি কমায় এবং চাকার ক্ষতি রোধ করে।
নেপথ্যের বিজ্ঞান
এটি মূলত পদার্থবিদ্যার ঘর্ষণ নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে। যখন দুটি পৃষ্ঠ একে অপরের উপর দিয়ে ঘষা খায়, তখন ঘর্ষণ বল উৎপন্ন হয় যা গতিকে বাধা দেয়। এখানে, রাবার এবং ইস্পাতের পেরেকযুক্ত ব্রেক শু রাস্তার পৃষ্ঠের সঙ্গে ঘর্ষণ তৈরি করে রথের চাকার ঘূর্ণন গতি কমিয়ে দেয়। রথের বিশাল ভর এবং গতির কারণে উৎপন্ন গতিশক্তিকে এই ঘর্ষণ বল তাপশক্তি এবং শব্দ শক্তিতে রূপান্তরিত করে ধীরে ধীরে থামিয়ে দেয়।