জগন্নাথ পুরীতে প্রতি ১২ বছর অন্তর নবকলেবর নামে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। এই সময় জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং সুদর্শন - এই চার বিগ্রহের নতুন মূর্তি তৈরি হয়। প্রতিস্থাপন করা হয় পুরোনো মূর্তি। যা রথযাত্রার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র আচার বলে গণ্য করা হয়।
সাধারণত প্রতি ৮, ১২ অথবা ১৯ বছর অন্তর এই নবকলেবর উৎসব পালিত হয়। যখন আষাঢ় মাসে দুটি পূর্ণিমা থাকে (যাকে জোড়া আষাঢ় বা মল মাস বলা হয়), তখন এই বিশেষ সময়টি আসে। সাধারণত, এই বিশেষ সময়টি আসে প্রতি ১২ বছর অন্তর। তবে কখনও কখনও তা ৮ বছর বা ১৯ বছর পরেও আসতে পারে। এটি মূলত তিথি নক্ষত্রের উপর নির্ভর করে।
দারু অন্বেষণ
নবকলেবর আচারের প্রথম ধাপ হল পবিত্র নিম গাছের খোঁজ করা। সেখান থেকে নতুন বিগ্রহ তৈরি করা হয়। এই গাছগুলিকে ‘দারু ব্রহ্ম’ বলা হয়। এমন গাছের কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ থাকতে হয়। এই খোঁজের কাজটি ‘বনজাগ যাত্রা’ নামে পরিচিত।
বিগ্রহ নির্মাণ
সঠিক দারু খুঁজে পাওয়ার পরের ধাপ হল বিগ্রহ নির্মাণ। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে ২১ দিনের মধ্যে নতুন বিগ্রহ খোদাই করা হয়। এই সময় মন্দিরের ভেতরে কঠোর নিয়ম মেনে চলা হয়।
ব্রহ্ম পদার্থ স্থানান্তর বা পরিবর্তন
এটি নবকলেবরের সবচেয়ে রহস্যময় এবং পবিত্র অংশ। গভীর রাতে যখন মন্দিরের সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয় এবং চারদিক নিস্তব্ধ থাকে, তখন প্রবীণ দৈতাপতি সেবকরা চোখ বেঁধে এবং হাতে দস্তানা পরে পুরোনো বিগ্রহ থেকে 'ব্রহ্ম পদার্থ' বা 'প্রাণ' নতুন বিগ্রহে স্থানান্তরিত করেন। এই 'ব্রহ্ম পদার্থ' আদতে কী, তা আজও একটি রহস্য।
পুরোনো বিগ্রহের সৎকার
ব্রহ্ম পদার্থ স্থানান্তরের পর পুরোনো বিগ্রহগুলিকে 'কোইলি বৈকুণ্ঠ' নামক স্থানে শাস্ত্রীয় বিধি মেনে সমাহিত করা হয়। নবকলেবর এই বার্তা বহন করে যে, পৃথিবীতে সবকিছুই নশ্বর, শুধু ব্রহ্মই অমর। এটি জীবনের চক্র এবং পরিবর্তনের প্রতীক। এটি একাধারে শোক ও নবজীবনের উৎসব, যা লক্ষ লক্ষ ভক্তের কাছে অত্যন্ত আবেগ ও ভক্তির সঙ্গে পালিত হয়। ২০১৫ সালে শেষ নবকলেবর উৎসব হয়েছিল।