বহরমপুর কলেজের বয়েজ হস্টেলে র্যাগিংয়ের অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগ, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের উপর নিয়ম করে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছিল দ্বিতীয় বর্ষের কিছু ছাত্র। কখনও জামাকাপড় কাচতে, কখনও আবার রান্না করা ভাত গুনতে বলা হত তাঁদের। এমন পরিস্থিতিতে প্রথম বর্ষের এক ভূগোল অনার্সের ছাত্র সমস্ত ঘটনায় সরাসরি ইমেল করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে অভিযোগ জানান। এরপরই নড়েচড়ে বসে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: বাংলায় কথা বলায় ‘বাংলাদেশি’ তকমা! CU-র ২ ছাত্রীকে র্যাগিং হিন্দিভাষী পড়ুয়াদের
জানা যাচ্ছে, শনিবার কলেজের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত দু’পক্ষের বক্তব্য প্রায় চার ঘণ্টা ধরে শোনা হয় সেখানে। তদন্তের ভিত্তিতে পাঁচজন সিনিয়র ছাত্রকে বহরমপুর কলেজের হস্টেল থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কলেজের তরফে তাঁদের লিখিতভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল বহরমপুর শহরের ধোপঘাটির কাছে অবস্থিত কলেজের বয়েজ হস্টেল। প্রায় ৪০ জন ছাত্র থাকেন সেখানে। অভিযোগ, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের নিয়ম করে হেনস্থা করত চতুর্থ সেমেস্টারের ওই পাঁচজন।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শান্তনু ভাদুড়ি জানান, চতুর্থ সেমেস্টারের কয়েকজন ছাত্র জুনিয়রদের উপর নিয়মিত চেঁচামেচি করত, হুকুম চালাত। কখনও জামাকাপড় কাচতে বলত, আবার কোনওদিন রান্না বেশি হলে ভাত গুনতে বলত। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে এবং হস্টেল থেকে তাঁদের বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আগামী দিনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। তবে অধ্যক্ষের আক্ষেপ, অভিযোগকারী ছাত্ররা হস্টেলের সুপার বা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রথমে কিছু জানাননি। বরং সরাসরি ইউজিসি-কে মেল করে বিষয়টি জানানো হয়। তাঁর কথায়, ছাত্ররা যদি আগে তাদের বলতেন, তাহলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হতো। হস্টেলের পড়ুয়াদের সমস্ত দিক দেখভাল করাই কলেজের দায়িত্ব।
র্যাগিংয়ের শিকার হওয়া এক পড়ুয়া জানান, একদিন রান্না করা ভাত একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। তখন তাঁদের বলা হয় ভাত গুনে দেখতে। অনেক সময় অকারণে ধমকানো হত, কাজ করানো হত। তাঁরা খুব ভয়ে থাকতেন। এখন নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সভাপতি ও কলেজের প্রাক্তনী নাজমুল মিঙ্গা জানান, ঘটনাটি শুনেছেন। তিনি র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে। কাউকে রেয়াত করা যাবে না। যদি প্রয়োজন হয়, অভিযুক্তদের কলেজ থেকেও বহিষ্কার করতে হবে। জুনিয়র পড়ুয়াদের নিরাপত্তা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ওই পাঁচ পড়ুয়াকে এক মাসের জন্য কলেজ থেকেও সাময়িক বহিষ্কারের চিন্তাভাবনা চলছে বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে।