রাজ্যে বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গে প্রবল গরমের ফলে নাজেহাল অবস্থা রাজ্যবাসীর। সেই পরিস্থিতিতে স্কুল পড়ুয়াদের জন্য মর্নিং ক্লাসের দাবি উঠছিল। তার কারণে আজ শুক্রবার এবং শনিবার সমস্ত স্কুলে (পাহাড়ি এলাকা ছাড়া) ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে তৈরি হয়েছে চরম অসন্তোষ, অভিভাবক থেকে শিক্ষক, বহু মহলই প্রশ্ন তুলছেন, ছুটি দিয়েই কী সমস্যার সমাধান সম্ভব? পঠন-পাঠন কবে শেষ হবে?
আরও পড়ুন: মারাত্মক গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত, ২ দিন স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত রাজ্যের, কোথায় খোলা?
এক মাস দু’দিনের গরমের ছুটির পরে রাজ্যের স্কুলগুলিতে ফের গত ২ জুন থেকে পঠন-পাঠন শুরু হয়েছিল। কিন্তু মে মাসের শেষ থেকে বাড়তে থাকা গরমের জেরে রাজ্যের নানা প্রান্তে বাড়তে থাকে অসুস্থতার খবর। পূর্ব মেদিনীপুরে কয়েকজন পড়ুয়া গরমে ক্লাস চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপরই জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ ৩ জুন ঘোষণা করে মর্নিং স্কুল চালুর সিদ্ধান্ত। ৪ জুন জেলার সব প্রাথমিক স্কুল মর্নিংয়ে হয়। কিন্তু, খুব বেশি সময় তা চালু থাকেনি। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়ে দেয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনও সংসদ এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। চাপের মুখে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ মর্নিং স্কুলের নির্দেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
এরপরই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। দিনের বেলায় ক্লাস চালু থাকলেও গরমে পঠন-পাঠন চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। একাধিক শিক্ষক সংগঠন পর্ষদকে চিঠি দিয়ে ফের মর্নিং স্কুল চালুর অনুরোধ করে। তবে তাতে সাড়া না দিয়ে, বৃহস্পতিবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে জানান, শুক্রবার ও শনিবার এই দু’দিন সব সরকারি স্কুলে পঠন-পাঠন স্থগিত থাকবে।
স্কুল শিক্ষা দফতর পরবর্তী বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ক্লাস স্থগিত রাখা হবে, অর্থাৎ পঠন-পাঠন বন্ধ থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপস্থিত থাকতে হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এক মাসেরও বেশি সময় গরমের ছুটি ছিল। এখন ফের ছুটি দেওয়া হলে সিলেবাস শেষ করা কীভাবে সম্ভব? বরং মর্নিং স্কুলই হতে পারত বাস্তবসম্মত সমাধান। শিক্ষক সংগঠনগুলি এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। সংগঠনের বক্তব্য, অভিভাবকেরাও চান না ছুটি দেওয়া হোক। এভাবে ছুটি দিয়ে রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করছে বলে তাদের অভিযোগ।
শুধু শিক্ষকই নন, ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরাও। অনেকের বক্তব্য, রোজ রোজ ছুটি দিয়ে কী হবে? সরকারি স্কুলে ভরসা রাখাটা কঠিন হয়ে পড়ছে। আগে গরমে তিন মাস মর্নিং স্কুল হত। এখন তা না করে শুধু ছুটি দেওয়া হচ্ছে। এতে বাচ্চারা কিছুই শিখতে পারবে না।