বর্ধমান স্টেশনে ধরা পড়েছে দুই ভুয়ো টিকিট পরীক্ষক। তবে এই ঘটনায় সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কারণ ধৃত দুই যুবকই দাবি করেছেন, তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। মোটা টাকার বিনিময়ে নিয়োগপত্র, মেডিক্যাল টেস্ট এমনকী টিকিট পরীক্ষক হিসেবে আইডি কার্ডও দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রেলের চাকরির নামে চলছে সুপরিকল্পিত প্রতারণার জাল? ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: শিয়ালদা ডিভিশনে ধরা পড়ল ২ ভুয়ো TTE, ‘বিশেষ ব্যাজ’ ব্যবস্থায় মিলছে সাফল্য
জানা গিয়েছে, ধৃত দুই যুবকের নাম বিনয় কুমার ও নিতেশ বলগুহার। দু’জনেই দিল্লির বাসিন্দা। তাঁদের কথায়, দিল্লির কর্নাট প্লেস এলাকার এক ব্যক্তি তাঁদের কাছ থেকে চার লক্ষ টাকা করে মোট আট লক্ষ টাকা নেন। এরপর দিল্লির এক রেল হাসপাতালের সামনে তাঁদের মেডিক্যাল পরীক্ষার মতো কিছু একটা করানো হয়। এরপর জানানো হয়, তাঁদের পোস্টিং হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান স্টেশনে। বর্ধমানে পৌঁছনোর পর তাঁদের হাতে একটি টিকিট পরীক্ষকের পরিচয়পত্রও তুলে দেওয়া হয়। বলা হয়, ‘লার্নিং পিরিয়ড’-এর জন্য ওভারব্রিজের কাজ করতে হবে।
নির্দেশ মতো তাঁরা একদিন সেই কাজ করেনও। কিন্তু পরদিন স্টেশনের ভিজিল্যান্স আধিকারিকদের সন্দেহ হয়। কারণ স্টেশনের বাইরে না দাঁড়িয়ে ওভারব্রিজে কাজ করছিলেন তাঁরা, যা টিকিট পরীক্ষকের সাধারণ কাজ নয়। সন্দেহ হতেই রেলের কমার্শিয়াল বিভাগের কর্মীরা তাঁদের জেরা করেন এবং তখনই সামনে আসে বিস্ফোরক তথ্য। ধৃতরা জানান, নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটিই ছিল সাজানো। তাঁদের হাতে যে পরিচয়পত্র তুলে দেওয়া হয়েছে, তাও ভুয়ো। তাঁরা এই মুহূর্তে বর্ধমানে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকছিলেন। ঘটনার পর রেল আধিকারিকেরা জানান, এই ধরনের ভুয়ো নিয়োগ ঠেকাতে ইতিমধ্যেই বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
হাওড়ার সিনিয়র ডিসিএম রাহুল রঞ্জন বলেন, ভুয়ো পরীক্ষক চিহ্নিত করতে নতুন ধরনের ব্যাজ চালু হয়েছে। সাধারণ মানুষকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। রেলের চাকরি পাওয়ার জন্য কোনো টাকা লাগে না। এটা সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে হয়। তবে ধৃতদের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁরা নিজেরাও বিশ্বাস করেছিলেন যে নিয়মমাফিক চাকরি পাচ্ছেন। সব প্রক্রিয়া এতটাই আসল মনে হচ্ছিল যে প্রতারণা বোঝার উপায় ছিল না। এখন প্রশ্ন উঠছে, যদি এই ধরনের প্রতারণা দিল্লি থেকে শুরু করে বাংলার বর্ধমান পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তবে কি এমন জালিয়াতি দেশের অন্য অংশেও চলছে? এই ঘটনা সামনে আসতেই রেল সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় দফতরে নিয়োগে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।