ন’বছর ধরে আত্মপরিচয় লুকিয়ে উত্তরবঙ্গের হিলিতে বসবাস করছিল এক বাংলাদেশি। এবার হিলি থানার পুলিশের তদন্তে ফাঁস হল তার আসল পরিচয়। ধৃত যুবকের নাম মনির মণ্ডল। ভারতে থাকার জন্য সে মৃত খুড়তুতো ভাইয়ের পরিচয় ব্যবহার করত বলে দাবি পুলিশের।বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার কোকতাড়া গ্রামের বাসিন্দা মনির।
আরও পড়ুন: কালীঘাটে ধৃত বাংলাদেশি কীভাবে পেলেন ‘খাঁটি ভারতীয়’ ড্রাইভিং লাইসেন্স?
জানা গিয়েছে, হিলির খারুন গ্রামে মনিরের কাকা ফচির মণ্ডল থাকতেন। ফকিরের দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ভুট্টো মণ্ডলের মৃত্যু হয় ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে। কাকা ও তাঁর ছেলেদের মৃত্যুর পর মনিরের ভারতে যাতায়াত বাড়তে থাকে। এরপর ২০১৬ সালে সে স্থানীয় দালালদের সহায়তায় ভুট্টো মণ্ডলের নামে আধার ও ভোটার কার্ড তৈরি করে ফেলে। বাবার জায়গায় ফচির মণ্ডলের নাম দেখিয়ে পরিচয়পত্রে নিজের ছবি দিয়েই তৈরি করে জাল নথি। এই জাল পরিচয়ের জোরেই সে হিলির চকগোপাল এলাকায় সংসার পাততে সমর্থ হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে একজন ভারতীয় নাগরিক বলেই জানত। কিন্তু সবকিছু প্রকাশ্যে আসে হিলি থানার পুলিশ গোপনে তদন্ত শুরু করার পর। অবশেষে ধরা পড়ে যায় মনির।
ডিএসপি (সদর) বিক্রম প্রসাদ জানিয়েছেন, মনির মণ্ডল নামে এক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে আটদিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, মনির দীর্ঘদিন ধরে এদেশে বসবাস করলেও বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করত। এমনকি সীমান্ত পেরিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র পাচারেও সে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে একজন মৃত ব্যক্তির নামে কীভাবে সরকারি পরিচয়পত্র বানানো সম্ভব হল? কারা সেই কাজে সাহায্য করল? গ্রাম পঞ্চায়েত কিংবা প্রশাসনের কোনও স্তরে কি সত্যিই কিছু ধরা পড়েনি? হিলির বিডিও চিরঞ্জিত সরকার বলেন, পুলিশের তরফে এখনও কোনও অভিযোগ পাননি। অভিযোগ এলে তদন্ত হবে।
প্রসঙ্গত, হিলি সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে দীর্ঘদিন ধরেই জাল পরিচয়পত্র তৈরির একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ। বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ করিয়ে ভারতে নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয় ওই চক্র। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন দালালকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। এমনকি আরও অনেক বাংলাদেশি নাগরিক এদেশে লুকিয়ে রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। এই ঘটনা ফের প্রমাণ করে দিল সীমান্তে নজরদারির পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থাতেও বড় ফাঁক রয়ে গিয়েছে।