কালীগঞ্জের মোলান্দিতে তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে ১০ বছরের স্কুল ছাত্রী তমান্না খাতুন। তার মৃত্যুকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে অন্য মূল অভিযুক্ত কালু শেখ জেরায় স্বীকার করেছে বোমা ছুঁড়ে মারার কথা। ধৃত স্বীকার করেছে, সে-ই তমান্নার বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়েছিল। পুরনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকেই ওই হামলা বলে জানিয়েছে সে। ঘটনার তদন্তে নেমে কালু শেখকে আগেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ম্যারাথন জেরায় তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন: কালীগঞ্জে বোমায় নাবালিকার মৃত্যুতে ধৃত মূল অভিযুক্তের ছেলে, তুঙ্গে তরজা
কালুর দাবি, সে একা ছিল না। বোমাবাজিতে আরও কয়েকজন যুক্ত ছিল। তাদের মধ্যে শরিফুল শেখ নামে একজনকে মঙ্গলবার রাতে পলাশী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে মূল অভিযুক্ত আনোয়ার শেখের ছেলে। বুধবার কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হলে বিচারক শরিফুলকে পাঁচদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মৃতার পরিবার ২৪ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। বুধবার সকালে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের তিন সদস্যের একটি দল মোলান্দির বেলেপাড়া এলাকায় যায়। তারা ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা মাটি, ক্ষতিগ্রস্ত জিনিসপত্র ও বোমার সকেটসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে। এলাকার কয়েকটি বাড়ির দেওয়াল থেকে বোমার চিহ্নও তারা পর্যবেক্ষণ করে। ফরেন্সিক দলের এক প্রতিনিধি জানান, নমুনাগুলি পরীক্ষার পরই বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব হবে। ময়নাতদন্তে নিশ্চিত হয়েছে, বোমার আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে তমান্নার। কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (গ্রামীণ) উত্তম ঘোষ জানান, তদন্ত নানা দিক দিয়ে এগোচ্ছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
উল্লেখ্য, ঘটনার দিন ছিল ২৩ জুন কালীগঞ্জ উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের দিন। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বিজয় উদ্যাপনের সময়েই তৃণমূল সমর্থকদের ছোড়া বোমায় মৃত্যু হয় ছোট্ট তমান্নার। অভিযোগ, ওই সময় মোলান্দির তৃণমূল কর্মীরা বিজয়ের আনন্দে মেতে ছিলেন। এলাকাটিতে তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে পুরনো রাজনৈতিক সংঘাত থাকলেও তমান্নার পরিবার সরাসরি কোনও সংঘর্ষে জড়ায়নি। তারা সিপিএমের সমর্থক বলেই স্থানীয়দের বক্তব্য। এদিন ঘটনাস্থলে যান তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির। তিনি ব্যক্তিগত সাহায্যের প্রস্তাব দিলে, তমান্নার পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে বিকেলে এসেছিলেন আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি। তমান্নার বাবা হোসেন শেখ বলেন, তাঁর মেয়েকে যারা মেরে ফেলেছে, তারা যেন কেউ রেহাই না পায়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।