নাম পূজা ভৌমিক। বর্ধমান শহরের বছর ৫৩-র পূজা ভৌমিক পেশায় চা বিক্রেতা। তবে আদপে পূজাদেবী একজন শিল্পী, গায়িকা। নাহ ‘কাঁচাবাদাম তারকা’র মতো হঠাৎ করে ভাইরাল হওয়া কোনও গায়িকা তিনি নন। জানা যাচ্ছে, পূজাদেবী একসময় হৈমন্তী শুক্লা, মান্না দে, লোপামুদ্রা মিত্র, আরতি মুখোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের সঙ্গে নাকি স্টেজে গান গেয়েছেন।
অবাক হচ্ছেন? তবে এমনটাই জানাচ্ছেন পূজা ভৌমিক নিজেই। একসময় তাঁর সুরের জাদুতে মজে থাকতেন বহু শ্রোতা। তবে এখন সেসবই শুধু স্মৃতি। এক দুর্ঘটনা সবকিছু বদলে দিয়েছে। স্বামীকে সংসারে সাহায্যের জন্য একদিন পূজা ভৌমিক ছেড়েছিলেন গানের দুনিয়া। বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে মিলে সংসার চালাতে চা বিক্রি করেন তিনি। বর্ধমান শহরের নার্স কোয়াটারের মোড়ে পূজাদেবী আর ওঁর স্বামী বিজন ভৌমিকের চায়ের দোকান। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলেই বর্তমানে সেই দোকান চালান।
নিউজ 18 বাংলাকে পূজা দেবী জানাচ্ছেন একসময় তাঁর স্বামীই তাঁকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন। তবে এক দুর্ঘটনায় পূজাদেবীর স্বামীর পা ভেঙে যায়। তারপরই বদলে যায় তাঁদের জীবন। এরপর থেকে বিজন ভৌমিক আর তাঁর স্ত্রীকে অনুষ্ঠান করতে নিয়ে যেতে পারতেন না। কোনওরকমে দোকানটিতে এসে বসতেন। অগত্যা পরিস্থিতি সামলাতে পূজাদেবীও ব্যবসায় হাত লাগান। তারপর থেকে আর স্টেজে উঠে গান গাওয়া সেভাবে হয়নি পূজা ভৌমিকের। ধীরে ধীরে পরিচিতিও হারাতে থাকেন তিনি।
পূজা ভৌমিকের কথায়, ‘এখন যে ধরনের অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেগুলি ঠিক আমাদের সময়কার অনুষ্ঠানগুলির মতো নয়। এখনকার অনুষ্ঠানের ধারা আলাদা। এগুলি ঠিক আমাদের উপযুক্ত নয়। আর তার থেকেও বড় কথা আমার স্বামী আর পারছেন না, তাই ওকে সঙ্গ দিতে ব্যবসায় হাত লাগাচ্ছি।’
নিউজ 18 বাংলাকে পূজা ভৌমিক আরও জানান, ‘স্টেজ শো হয়ত করি না, তবে গানের চর্চা এখনও করি। নিয়মিত গানের চর্চা বজায় রয়েছে। ওটা ছাড়তে পারব না। ওটা বড়ই ভালোবাসার জায়গা।’ পুরনোদিনের কথা মনে আসলে চোখ জলে ভরে যায় তাঁর। তাঁর কথায়, ‘পুরনো দিনের কথা মনে করলে খুব কষ্ট হয়, ওই দিনগুলি আর ফিরে পাব না।’ তবে আপাতত চায়ের দোকান নিয়েই ব্যস্ত তিনি। বিভিন্ন ধরনের চা বানান। মালাই চা, ফ্লেবার চা। খরিদ্দারদের চা খাইয়েই তাঁর তৃপ্তি। গোপন এই প্রতিভার কথা কাউকে বলতে চান না। তাঁর দোকানের অনেক ক্রেতার কাছে খোঁজ করেও পূজা ভৌমিকের শিল্পী সত্ত্বার কথা জানা যায়নি। কারণ, তাঁর এবিষয়ে কিছুই জানেননা।