অভিষেক একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত। মাস গেলে মাইনে মেরেকেটে ২০ হাজার। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী সুজাতা রয়েছে ব্যাঙ্কের সেলস বিভাগে। সারা দিনের খাটনি সামলে বাড়ি এসে দুজনই সামলায় ছোট্ট চিকুকে। তাছাড়, রান্নাবান্নাসহ ঘরের কাজ তো আছেই। কিন্তু স্কুলের চাপ যেন বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি এক্স্ট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস। এই পরিস্থিতিতে অভিষেককে লোনের চেষ্টা করছে। সুজাতার সঙ্গে একদিন কথায় উঠে এল এই প্রসঙ্গ। ‘একদিকে যেমন ডিজিটাল এডুকেশন, তেমনই অন্যদিকে নানা টিউশন, ক্লাসেস। একটা বাচ্চা মানুষ করা ভীষণ কঠিন পড়ছে দিন দিন। আমাদের সময় তো এতকিছু ছিল না!’
সমস্যা শুধু অভিষেক-সুজাতার নয়…
খুদেকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে গিয়ে অভিষেক-সুজাতা যে সমস্যায় পড়ছেন, তা কিন্তু তাদের একার নয়। তাদের মতোই লক্ষ লক্ষ বাবা-মা বর্তমানে এই সমস্যার শিকার। আগামী দিনে যারা বাবা-মা হতে চলেছেন, তারাও যেন দেখতে পাচ্ছেন এই সমস্যাগুলি। তাদের সেই দেখাই এবার উঠে এল রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে। সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘের পপুলেশন ফান্ডের তরফে একটি সমীক্ষা করা হয়েছে। তাতেই দেখা গিয়েছে, বিশ্বজুড়ে কমছে জন্মহার!
আরও পড়ুন - ‘মা, প্রেমিকা কী…’ খুদের উদ্ভট প্রশ্নে নাজেহাল? বিরক্ত না হয়ে কীভাবে উত্তর দেবেন
১৪ হাজার ব্যক্তির উপর সমীক্ষা
১৪ টি দেশের মোট ১৪ হাজার ব্যক্তির উপর সমীক্ষা চালিয়েছে রাষ্ট্রসংঘের এই বিশেষ সংস্থা। দেখা গিয়েছে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন ব্যক্তি সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে তেমন ইচ্ছুক নন। কারণ? সন্তান পালনের দায়িত্বকে ভয় পাচ্ছেন? রাষ্ট্রসংঘের সমীক্ষা বলছে, অনেকেরই ২ বা তার বেশি সন্তান নেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। কিন্তু সামাজিক ও আর্থিক অবস্থার কারণে বাস্তবায়িত হচ্ছে না অনেকের ‘স্বপ্ন’!
আরও পড়ুন - সমস্যা দেখলে ঘাবড়ে যান? এই ধাঁধার উত্তর বলে দেবে কত সক্রিয় আপনার ব্রেন
কোন কোন দেশে সমীক্ষা?
মূলত নিম্ম ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে এই সমস্যা প্রকট। সমীক্ষাটি করা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, হাঙ্গেরি, জার্মানি, সুইডেন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নাইজেরিয়াতে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ বাস করেন এই ১৪টি দেশে। তালিকায় নিম্ন, মধ্য এবং উচ্চ আয়, সবরকম দেশই রয়েছে। এমনকি বেশি জন্মহার ও কম জন্মহারের দেশও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।
কেন কমছে জন্মহার?
UNFPA-এর প্রধান ডাঃ নাটালিয়া কানেম বলেন, ‘গোটা বিশ্বের জন্মহারে অভূতপূর্ব পতন শুরু হয়েছে।’ তাঁর কথায়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থায় এর পিছনে মূলত দায়ী। যার সমাধান না হলে জন্মহার আরও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।