বামের ভোট রামে যায় বলেই বাংলায় বিজেপির উত্থান। সিপিএমের হার্মাদরা এখন দল বদলে বিজেপিতে গিয়ে জল্লাদ হয়েছে। সিপিএম নির্বাচনে ভোট ট্রান্সফার করে বলেই বাংলায় বিজেপির শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। এই কথাগুলি শোনা যায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। এমনকী তৃণমূল কংগ্রেসের অনেক নেতাই এমন দাবি করে থাকেন। সত্যিই কি বিজেপির প্রতি সিপিএম দুর্বল হয়ে পড়ছে? এমন প্রশ্নই এখন উঠতে শুরু করেছে হুগলি জেলা সিপিএমের অন্দরে। শনিবার সিঙ্গুরে শুরু হয়েছে সিপিএমের জেলা সম্মেলন। সেখানে পেশ করা হয়েছে রাজনৈতিক–সাংগঠনিক খসড়া প্রতিবেদন। আর তাতেই এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
সিপিএম নেতারা বলে থাকেন, তৃণমূল–বিজেপি দু’জনেই তাঁদের রাজনৈতিক শত্রু। কিন্তু মূল প্রতিপক্ষ তৃণমূল কংগ্রেস। তাহলে কি কোথাও বিজেপিকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্নও উঠছে। তাই এবার বিজেপি সম্পর্কে আত্মসমীক্ষার ডাক দিয়ে প্রতিবেদনের ১৮ নম্বর পাতায় লেখা হয়েছে, ‘আমাদের একটা অংশের ভিতরেও বিজেপির প্রতি নরম মনোভাব এবং দুর্বলতা কাজ করছে কিনা ভেবে দেখা দরকার।’ এই রাজ্যে সিপিএম বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করে চলছে। এমন অভিযোগ বারবার তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর তাই এখানে স্লোগান উঠেছে, ‘আগে রাম, পরে বাম’। সিপিএম প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে, তৃণমূল কংগ্রেসের অত্যাচার থেকে বাঁচতে দলের অনেকে বিজেপি শিবিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
আরও পড়ুন: মেট্রো চুঁচুড়া–ব্যান্ডেল পর্যন্ত আনতে উদ্যোগী সাংসদ রচনা, চিঠি অশ্বিনী বৈষ্ণবকে
সিপিএমের অনেক নেতারা চান, বিজেপিকে ক্ষমতায় নিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেসকে জব্দ করতে। আর সেটাই এখন শীর্ষ নেতৃত্বের কানে চলে আসায় উঠেছে জেলা সম্মেলনে। সিপিএমের এক জেলা নেতার বক্তব্য, ‘দলের একজনও বিজেপির প্রতি দুর্বল নন। বরং যাহা তৃণমূল, তাহাই বিজেপি। তৃণমূল–বিজেপি সেটিংয়ের কথা মানুষ জানেন। দিদি–মোদী সেটিং আছে।’ পাল্টা হুগলি জেলার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দিলীপ যাদব বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলে আসছি রাম–বাম সেটিং আছে। সিপিএমের নথি সেটাকেই সিলমোহর দিল।’
এই জেলা সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদনে বিজেপিকে নিয়ে উদ্বেগও তুলে ধরেছে সিপিএম। মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সেখান থেকে ফেরানো যায়নি। বরং তাঁরা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গেই থেকেছেন। সিপিএমের এখনও শূন্যতা কাটেনি। প্রত্যেকটি নির্বাচনে বিজেপির পিছনে রয়েছে। না হলে জামানত জব্দ হয়েছে। তাই খসড়া প্রতিবেদনে দাওয়াই দেওয়া হয়েছে, ‘মতাদর্শগতভাবে উন্নত বাহিনী গড়ে তোলাই এই পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ।’ তবে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘সিপিএমের বড় অংশ আমাদের ভোট দিচ্ছে। সিপিএম কর্মীরা তৃণমূলকে হারাতে চান। এই দেওয়াল লিখন সিপিএম পড়তে ব্যর্থ হয়েছে।’