আগামী মঙ্গলবার বাংলা নববর্ষ। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এখন শহর থেকে জেলায় বসেছে ‘সেল’। এই সেলের বাজারকে বলা হয় ‘চৈত্র সেল’। এখানে জামাকাপড় থেকে শুরু করে ঘরের নানা সামগ্রীর উপর বড় পরিমাণ ছাড় থাকে। বিশেষ ছাড়ে নতুন পোশাক কিনতে মানুষজন ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তবে এই কেনার হিড়িকে একটা অন্য ছবি সামনে এসেছে। সেটি হল, শহর থেকে গ্রামবাংলার নানা শপিং মলে মহিলাদের ব্যাপক ভিড় চোখে পড়ছে। সেখানে পুরুষরা রীতিমতো সংখ্যালঘু। কেন এমন ঘটনা ঘটছে? এই প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে।
নিউ মার্কেট, হাতিবাগান মার্কেট, কলেজ স্ট্রিট, গড়িয়াহাট, কসবার অ্যাক্রোপলিস, লেক মার্কেটের লেক মল—সর্বত্র মহিলাদের উপস্থিতি বেশি দেখা যাচ্ছে। এই বিষয়টি জানার জন্য প্রশ্ন করা হয় এক যুবতীকে। লেক মলে ‘চৈত্র সেলের’ বাজার করতে এসেছেন মহুয়া রায়। তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপক নারী সমাজের উপস্থিতির নেপথ্যে রয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। আমিও গত ৬ মাসের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা জমিয়ে শপিং মলে এসেছি সেলের বাজার করতে। আগে এমন স্বাধীনতা ছিল না। সবটাই নিজেকে জোগাড় করতে হতো। এখন মহিলাদের এই আর্থিক স্বাধীনতা মিলেছে।’ শহর থেকে জেলার বাজারেও চলছে চৈত্র সেল। জামাকাপড়, চটি–জুতোর দোকানগুলি দিচ্ছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। আর এই সব মিলিয়েই বাজারমুখী হচ্ছেন মহিলারা। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকে গিয়েছে টাকা।
আরও পড়ুন: এবার অনশন করার সিদ্ধান্ত নিলেন চাকরিহারাদের একাংশ, এসএসসি দফতরের সামনে চলবে
দিনহাটার রাখালমারি গ্রামের বধূ নমিতা গুহ। কোলে ছেলেকে নিয়ে চওড়াহাট বাজারে এসেছেন। সেখানে ঘুরে দেদার জামাকাপড় কিনলেন। আর সেই সঙ্গে জানালেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে মাসের প্রথমে ঢুকেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা। আর আগের কিছু টাকা জমানো ছিল। সব মিলিয়ে হাতে ৬ হাজার টাকা নিয়ে বাজারে এসেছেন তিনি। স্বামী পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। তাই বাজারে আসতে পারেননি। স্বামীর জন্যও শার্ট কিনে তিনি নিয়ে যাবেন। বছরে একবার আসে চৈত্র সেল। সুতরাং জামাকাপড় কেনার মজাটাই আলাদা। এখন আর স্বামীর কাছে টাকা চাইতে হয় না। দিদির দেওয়া টাকাই সেলের বাজারে খরচ করছেন।
শেওড়াফুলির বাসিন্দা চৈতালি চক্রবর্তী। তিনি শ্রীরামপুরের চৈত্র সেলের বাজারে এসে দেদার শপিং করছেন। স্বামী আইটি কর্মী। তাই কাজে ব্যস্ত। গৃহবধূ চৈতালি দেবী একাই এসেছেন শ্রীরামপুরের শপিং মলে। তাঁর বক্তব্য, ‘স্বামীর কাজের চাপ আছে। তাই শপিং করতে আসতে পারেননি। আর পাঁচ মাস ধরে দিদির দেওয়া লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা জমিয়ে শপিং করতে এসেছি। আর সবার জন্য জামাকাপড় কিনে যখন বাড়ি ফিরব তখন স্বামীর কাছে সেটাই হবে বড় সারপ্রাইজ। আগে স্বামী সারপ্রাইজ দিত। আমার তো আর রোজগার নেই। এখন দিদির দৌলতে আমি পরিবারের সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে পারব। এপ্রিলের শুরুতেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। তাই বেরিয়ে পড়েছি।’ সুতরাং চৈত্র সেলের ছাড়, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা এবং পয়লা বৈশাখের প্রস্তুতি মিলিয়ে মুখে হাসি ফুটেছে মহিলাদের।