টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম সহ রাজ্যের একাধিক জেলা। এই অবস্থায় বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, এই বন্যা সম্পূর্ণভাবে ‘ম্যান মেড’। কেন্দ্র এবং ডিভিসি-র ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ভূমিকাকেই এরজন্য দায়ী করেছেন তিনি। পাশাপাশি, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ নিয়ে আবারও কেন্দ্রকে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি কতদিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে তাও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: DVC না জানিয়ে ৭১ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে, কাঠগড়ায় তুলে ক্ষোভ উগরে দিলেন মানস
মঙ্গলবার বিধানসভায় পরিবেশরক্ষার শপথ নেন মমতা। সেখানেই তাঁর অভিযোগ, কোনওরকম আগাম বার্তা ছাড়াই মাইথন ও পাঞ্চেত সহ বিভিন্ন বাঁধ থেকে জল ছেড়ে দিচ্ছে ডিভিসি। এমনকি বিহার-ঝাড়খণ্ড থেকেও জল ছাড়ায় বাংলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের জলবন্দি পরিস্থিতির জন্য তিনি দায়ী করেন ভূটানকে। বলেন, ইন্দো-ভূটান নদী কমিটিতে বাংলার কোনও প্রতিনিধি নেই। তাই সেখানে বাংলার অবস্থান কেউ তুলে ধরতে পারে না।’
ঘাটালের দুর্দশা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করতে জমি নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে। প্রয়োজনে রুট ঘুরিয়ে দিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী যাতে কারও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। একইসঙ্গে জানিয়ে দেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ইতিমধ্যে রাজ্য বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য ৫০০ কোটি এবং মোট ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক চাপানউতোরও তীব্র। ঘাটালের সাংসদ দেব সম্প্রতি কেন্দ্রের নিষ্ক্রিয়তাকে দুষে বলেছেন, ১০ বছর ধরে বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও কেন্দ্র থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন ঘাটাল নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন কটাক্ষে বিদ্ধ হচ্ছেন তিনি, তখন পাল্টা জবাবও দিয়েছেন এই তারকা সাংসদ।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিয়েও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০১১ সালে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র দেড় লক্ষ পুকুর কাটার কথা বলেছিলেন। সেই ভাবনা থেকেই ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পে ইতিমধ্যে সাড়ে চার লক্ষ পুকুর কাটা হয়েছে। মমতার মতে, যত বেশি পুকুর থাকবে, বৃষ্টির জল তত বেশি ধরে রাখা যাবে এবং বন্যার প্রকোপও কমবে। সেইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, পুকুর বুজিয়ে বাড়ি তৈরি করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ড্রেজিং না হওয়াকেও বড় কারণ হিসেবে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলার দুই বন্দরে সময়মতো ড্রেজিং না হওয়ার ফলে জল নিষ্কাশনে সমস্যা তৈরি হয়। এ নিয়ে পুর ও পরিবেশ দফতরকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। বিধানসভায় আরও একাধিক বিষয়ের উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিবেশ দূষণ রোধে রাজ্যের নিজস্ব আইন তৈরির পরিকল্পনা, বিধায়কদের উপস্থিতির উপর পুরস্কার ব্যবস্থা এবং বিজেপির বিক্ষোভের নিন্দা প্রভৃতি।