খাতায়-কলমে তিনিই হলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। অথচ, স্কুলে আসেন না প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল! কিন্তু, তা বলে কি মাস মাইনেটাও নিচ্ছেন না সেই 'অফিসিয়াল' প্রধান শিক্ষক? সেটা নিচ্ছেন, এবং অবশ্যই নিচ্ছেন। তার থেকেও বড় কথা হল - স্কুলের মিডডে মিল রান্নার জন্য জ্বালানি থেকে শুরু শস্য, আনাজ, সবজি - প্রভৃতি কিনে সংশ্লিষ্ট দোকানদারদের সেই সমস্ত পণ্য়েরও দামও মেটানি তিনি। সমস্ত ধার বাকি রেখেই যেন বেমালুম 'হাওয়া' হয়ে গিয়েছেন প্রধান শিক্ষক! ফলত, দোকানদাররাও আর ওই স্কুলের কাছে কোনও পণ্য বিক্রি করছেন না। যার জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্কুলের মিডডে মিলও!
এই ঘটনা ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা ব্লকের কনিয়াড়া যাদবচন্দ্র হাইস্কুলে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, এই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক বাজারে প্রায় ৫৮ হাজার টাকার ধার না মিটিয়েই স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রত্যেক মাসে বাড়িতে বসে বেতন নিলেও আর স্কুলমুখো হন না তিনি। এই অবস্থায় অন্য একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি স্কুলের সব কাজ সামলাচ্ছেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য হল, এই প্রেক্ষাপটে বাধ্য হয়েই স্কুলের মিডডে মিল বন্ধ করতে হয়েছে। কারণ, এত দিন যাঁদের কাছ থেকে মিডডে মিল রান্নার জন্য জ্বালানি, আনাজ প্রভৃতি কেনা হত, তাঁরা কেউই আর স্কুলকে পণ্য বিক্রি করছেন না। তাঁদের সাফ কথা, আগে বকেয়া হাজার হাজার টাকা মেটাতে হবে। তবেই নতুন করে তাঁরা জিনিসপত্র বিক্রি করবেন।
কিন্তু, সেই বকেয়া মেটাবে কে? কারণ, মিডডে মিলের খরচ তো হেডস্যারের পরিচালনা করার কথা। তিনি তো ওই খাতে স্কুলের বরাদ্দ কোনও টাকাই আর স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। এমনকী, স্কুল কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসনও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি। এই অবস্থায় গত ফেব্রুয়ারি (২০২৫) মাস থেকে এই স্কুলে মিডডে মিল বন্ধ হয়ে রয়েছে। ছোট ছোট শিশুরা তাদের জন্য বরাদ্দ অন্নটুকুও পাচ্ছে না!
সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিডিও (বাগদা) প্রসূন প্রামাণিককে চিঠি লেখেন। আবেদন করেন, তাঁকে অন্তত মিডডে মিলের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। এরপর সমস্যা মেটাতে বিডিও একটি বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যোগ দিলেও স্কুলের হেডস্যার সেখানেও যাননি। যদিও, বিডিও দ্রুত মিডডে মিল সংক্রান্ত সমস্যা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।