মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এখানে ঘুরতে এসেছেন প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। কেন্দ্রীয় সরকারের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এএসআই) সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছে।এই অবস্থায় পর্যটনশিল্পের এমন সম্ভাবনা দেখে রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বাড়িয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাইট টু ইনফরমেশন (আরটিআই)-এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি এই তথ্য চেয়েছিলেন। তার ভিত্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে এএসআই। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ সালে হাজারদুয়ারিতে মোট ৯,৫৭,৫২৩ জন পর্যটক এসেছেন। আর এখানে টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৪২ লক্ষ টাকারও বেশি। এর আগের বছর ২০২২-২৩ সালে হাজারদুয়ারি বেড়িয়েছেন ৮,৩৪,৭৯৮ জন পর্যটক। তখন টিকিট বিক্রি হয়েছিল ২ কোটি ১১ লক্ষ টাকার মতো। তারও আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১-২২ সালে পর্যটকের সংখ্যা ছিল অনেকটাই কম। মাত্র ২,৪১,৩৭৪ জন। টিকিট বিক্রির অঙ্ক ছিল মাত্র ৬০ লক্ষ টাকার কিছু বেশি। সেই সময় করোনার প্রভাব ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই কম ছিল সেই সময়ের ভিড়। তবে তার পর থেকেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। হাজারদুয়ারিতে রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বাড়িয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৪১.৭৩ লক্ষ টাকা। ২০২২-২৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬.২৭ লক্ষ টাকা।২০২৩-২৪ সালে সেই অঙ্ক পৌঁছেছে ৫৬.৪২ লক্ষে।
শুধু তাই নয়, হাজারদুয়ারিকে ঘিরে জেলায় ব্যবসার গতিও বেড়েছে। মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বর্তমানকে জানিয়েছেন, করোনার পর থেকে পর্যটকদের ভিড় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এখানকার ইতিহাস, স্থাপত্য ও সংস্কৃতি মানুষকে টানে। তাঁর মতে, হাজারদুয়ারিতে ঘুরতে এলে পর্যটকরা কাছাকাছি অন্যান্য জায়গাতেও যান। ফলে লালবাগ শহর ও আশপাশের ব্যবসাও বাড়ছে। তবে তিনি মনে করেন, আরও বেশি পর্যটক টানতে কিছু আধুনিক বিনোদনের ব্যবস্থাও দরকার।লালবাগে ভালো রকমের বিনোদনমূলক প্রকল্প থাকলে আরও অনেক কর্মসংস্থান হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, দীঘা যেমন পর্যটনের জন্য একেবারে সাজানো হয়েছে, তেমনভাবেই ইতিহাসকে ঘিরে মুর্শিদাবাদেও অনেক কিছু করা সম্ভব।
এদিকে, মহরম উপলক্ষ্যে ইমামবারার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে পর্যটকদের জন্য।সারাবছর এই দরজা বন্ধ থাকে। শুধু মহরমের সময় ১০ দিন তা খোলা হয়। এই সময় হাজারদুয়ারি এবং ইমামবারা চত্বরে আলোর সাজে রঙিন হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এই দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই হাজির হচ্ছেন প্রচুর পর্যটক। কেউ আসছেন জেলা থেকে, কেউ বা রাজ্যের বাইরেও। জেলার পর্যটনকে আরও সুরক্ষিত রাখতে লালবাগ শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মহরম উপলক্ষ্যে নানা অনুষ্ঠান হচ্ছে। সেই অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।