রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা বাড়ি। লাজপত নগরে হাড়হিম করা জোড়া খুনের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে দিল্লিতে।প্রতিদিনের মতো ফাঁকা বাড়িতে একাই ছিলেন মা ও তার ১৪ বছরের নাবালক পুত্র। কিন্তু কয়েক মুহূর্তের মধ্যে পরিবেশ-পরিস্থিতি এতটা বদলে যাবে, তা কেউ টেরই পায়নি। গোটা ঘটনা ঘিরে রীতিমতো তপ্ত হয়ে উঠেছে এলাকার।
পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার রাত ৯টা নাগাদ স্ত্রী-ছেলেকে ফোনে না পেয়ে ভয়ে পেয়ে সরাসরি থানায় ফোন করেন কুলদ্বীপ সেওয়ানি। পুলিশকে তিনি জানান, তাদের ফ্ল্যাটে ঢোকার সিঁড়ির মুখে রক্তধারা বইছে। দরজাও আটকানো।খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ঢোকেনা তারা। দেখা যায়, ঘরের ফ্লোর জুড়ে বইছে রক্তধারা। বাথরুম থেকে ধীরে বয়ে আসছে সেই লাল-স্রোত। এরপরেই বাথরুমের দিকে এগিয়ে যেতেই স্তম্ভিত হয়ে যান সকলে। মেঝেতে পড়ে রয়েছে রুচিকা সেওয়ানি ও তাঁর ছেলে কৃষের নিথর দেহ। গোটা শরীরে ধারালো অস্ত্রের ক্ষত। পুলিশ জানিয়েছে, ঘরের ভেতরেই গলা কেটে দুজনকেই হত্যা করা হয়েছে।
জানা গেছে, রুচিকা সেওয়ানির স্বামী কুলদীপ, লাজপতনগর বাজারে একটি পোশাকের দোকানের মালিক। তাদের ছেলে কৃষ দশম শ্রেণীর ছাত্র।সেওয়ানি পরিবারের পরিচারক এবং গাড়িচালকের কাজ করতেন বিহারের বাসিন্দা মুকেশ (২৪)।পুলিশ জানিয়েছে, গৃহকর্ত্রীর বকুনি এবং আর্থিক লেনদেন ঘিরে বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটে মুকেশ। ইতিমধ্যে মুকেশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেরায় মুকেশ জানিয়েছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে সে কয়েকদিন কাজে যেতে পারেনি। সেই নিয়ে রুচিকা তাঁকে বকাঝকা করেন এবং স্বামীর কাছ থেকে নেওয়া ৪০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলেন। সেই সময়েই রাগের বশে মুকেশ রুচিকাকে আক্রমণ করে। পরে ছেলে কৃষ ঘটনাস্থলে চলে এলে তাকেও খুন করা হয়, যাতে পুরো ঘটনাটি প্রকাশ্যে না আসে।
অভিযুক্ত মুকেশ বিহারের বৈশালীর জনদহা থানার অন্তর্গত এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে দিল্লির অমর কলোনিতে থাকত, যা সেওয়ানি পরিবারের বাড়ির কাছেই।পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরই মুকেশ পালিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মুঘলসরাই এলাকা থেকে।অভিযুক্ত বিহারগামী ট্রেনে উঠে পালানোর চেষ্টা করছিল।খবর পেয়ে দিল্লি পুলিশ দীনদয়াল উপাধ্যায় জংশনে খবর পাঠায়। এরপর জিআরপি, আরপিএফ ও মুঘলসরাই থানার যৌথ অভিযানে তাকে স্টেশন থেকে ধরে ফেলে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে সে অপরাধের কথা স্বীকার করেছে।পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে ঘটনাস্থল থেকে ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।পুলিশ আরও জানিয়েছে, মহিলার বেডরুম ও ছেলেটির দেহ ওয়াশরুম থেকে উদ্ধার হয়। দুজনের দেহই রক্তে ভেজা ছিল। ছুরির একাধিক আঘাত মিলেছে শরীরে। তবে ঘটনা এখন তদন্ত সাপেক্ষ।