‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থানগুলি নিয়ে পাকিস্তানকে রিয়েল টাইমে গোয়েন্দা তথ্য দিচ্ছিল চিন। এমন বিস্ফোরক দাবি করলেন ভারতীয় সেনার উপপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং। তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে, চার দিনের ওই সংঘাতে ভারত একসঙ্গে তিনটি প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করেছিল-পাকিস্তান, চিন এবং তুরস্ক। পাশাপাশি কীভাবে পাকিস্তানের ন’টি জঙ্গিঘাঁটি চিহ্নিত করেছিলেন সেনা আধিকারিকেরা, কী ভাবে সেখানে হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, বিশদে বলেছেন সেনার উপপ্রধান।
নয়া দিল্লিতে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-র একটি অনুষ্ঠানে জেনারেল রাহুল আর সিং বলেন, 'পাকিস্তান ছিল সম্মুখভাগে। কিন্তু চিন তাদের সর্বতোভাবে সহায়তা করছিল। তুরস্কও যে ধরনের সাহায্য করেছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।' তিনি আরও বলেন, সংঘর্ষ চলাকালীন ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস স্তরে যখন আলোচনার চেষ্টা হচ্ছিল, তখন পাকিস্তান মন্তব্য করেছিল, 'আমরা জানি, তোমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভেক্টর প্রস্তুত আছে। অনুরোধ করব, সেটা সরিয়ে নাও।'এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, পাকিস্তান চিনের কাছ থেকে সরাসরি গোয়েন্দা ইনপুট পাচ্ছিল বলে দাবি তাঁর।রাহুল বলেছেন, ‘আমাদের সামনে একটা সীমানা ছিল। প্রতিপক্ষ ছিল দু’জন, আসলে তিন জন। পাকিস্তানই সামনে ছিল। তাদের সবরকম সাহায্য করছিল চিন। পাকিস্তানের ৮১ শতাংশ মিলিটারি হার্ডওয়্যার চিন থেকে আসে। অস্ত্রও চিনের। চিন তার অস্ত্রগুলো পাকিস্তানের মাধ্যমে কার্যত পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করছে। যেন এক ‘লাইভ ল্যাব’ হাতে পেয়েছে তারা।'তিনি আরও বলেন, 'চিন কখনও সরাসরি ময়দানে নামে না। বরং প্রতিবেশীকে দিয়ে যুদ্ধ করিয়ে নেয়। এটিই তাদের পুরনো কৌশল।'
এই আলোচনায় সেনা উপপ্রধান আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন, তা হল তুরস্কের ভূমিকা। তিনি বলেন, 'তুরস্কও পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং যেভাবে তারা সাহায্য করেছে, তাও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ডিজিএমও স্তরের আলোচনা চলছিল। তখন পাকিস্তান চিন থেকে আমাদের ভেক্টরগুলির লাইভ আপডেট পাচ্ছিল। ভবিষ্যতে এই ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য আমাদের একটি শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন। তবে অপারেশন সিঁদুর অভিযানে আমাদের কিছু দেশীয় অস্ত্র ভালোভাবে কাজ করেছে। কিন্তু কিছু অস্ত্র ভালোভাবে কাজ করেনি।'
তিনি আরও বলেন, 'কয়েক বছর ধরে আমরা যেভাবে যন্ত্রণা শোষণ করেছিলাম, সেভাবে এই যন্ত্রণা শোষণ করার কোনও সুযোগ নেই। অপারেশন সিঁদুর লক্ষ্যবস্তু পরিকল্পনা এবং নির্বাচন প্রযুক্তি এবং মানব বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সংগৃহীত প্রচুর তথ্যের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল। সুতরাং মোট ২১টি লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা হয়েছিল, যার মধ্যে নয়টি লক্ষ্যবস্তুতে আমরা অভিযান চালানো বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেছি। শেষ দিন বা শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে পাকিস্তানের এই নয়টি লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালানো হবে।' রাহুল বলেন, 'চিন-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা সম্পর্ক প্রচলিত অস্ত্র স্থানান্তরের বাইরেও বিকশিত হয়েছে। অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তান চিন থেকে সরাসরি ইনপুট পাচ্ছিল। আমাদের দ্রুত এই বিষয়ে কাজ করতে হবে। তাই ইলেকট্রনিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে, আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ইজরায়েলের মতো আমাদের কাছে আয়রন ডোম নেই। আমাদের কাছে এই ধরণের বিলাসিতা নেই। কারণ এই জিনিসগুলির জন্য অনেক টাকা খরচ হবে। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।'